রক্ষকই যখন ভক্ষক
রিজার্ভ চুরি ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি কাম্য
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ছবি: সংগৃহীত
২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক হ্যাকারদের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফেডারেল রিজার্ভ অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে ৮ কোটি ১০ লাখ ১ হাজার ৬২৩ মার্কিন ডলার ‘লুট’ করা হয়। ঘটনার প্রথম থেকেই এ ঘটনার সঙ্গে খোদ বাংলাদেশ ব্যাংকের কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত, এমন দাবি বিভিন্ন মহল করে আসছিল। প্রাথমিক তদন্তেও তেমন আভাসই মিলেছিল। এমনকি এ ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের তদন্ত সংস্থা এফবিআইর সঙ্গে যুক্ত এক কর্মকর্তাও তখন জানিয়েছিলেন, রাষ্ট্রীয় সহায়তায় এ ভয়াবহ চুরির ঘটনা ঘটে। তবে ওই দুষ্কর্মের শিকড় যে কতটা গভীরে ছিল, বিগত সরকারের পতনের পর ক্রমেই তা বেরিয়ে আসছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনেও অনেক বিষয় তুলে ধরা হয়। শুক্রবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ-রিজার্ভ চুরিতে সব ধরনের সহায়তা করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ অ্যাকাউন্টস ও বাজেটিং বিভাগের কর্মকর্তারা। হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে ‘দেশের জনগণের কষ্টার্জিত রিজার্ভ’ সরানোর নীলনকশা তারাই চূড়ান্ত করেন। সে লক্ষ্যেই ছক অনুযায়ী ‘আরটিজিএস’ নামে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। এর সঙ্গে সুইফট প্রক্রিয়ার সংযোগ স্থাপন করে হ্যাকিংয়ের সূত্রপাত ঘটানো হয়। তৎকালীন গভর্নরও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে রিজার্ভ হাতিয়ে নেওয়ার পুরো বিষয়টি ২৪৪ দিন গোপন রাখেন।
জানা যায়, চুরির সময় যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক সন্দেহজনক ব্যক্তির নামে বড় অঙ্কের ৩৫টি পেমেন্ট হওয়ায় ফান্ড ট্রান্সফার বন্ধ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তেমন কোনো তাগিদ দেখানো হয়নি। হ্যাকিংয়ের ২৫ দিন পর ম্যানিলার দি ইনকোয়ারার পত্রিকা রিজার্ভ লোপাটের খবর যদি প্রকাশ না করত, তাহলে এমন ‘সাগর চুরির’ তথ্য দেশের মানুষের কাছে অজানাই থেকে যেত।
উল্লেখ্য, ঘটনা প্রকাশ হয়ে পড়লে চুরির ৩৯ দিন পর নানা মহলের চাপে মামলা করে বাংলাদেশ ব্যাংক, যার তদন্ত আট বছর ধরে চলছে। অপরাধ তদন্ত সংস্থা সিআইডি এখনো এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়নি। পরবর্তী সময়ে যদিও রিজার্ভ থেকে হাতিয়ে নেওয়া অর্থ থেকে ১৮ মিলিয়ন ডলার উদ্ধার করা হয়েছে, তবে বাকি বিশাল অঙ্কের অর্থ এখনো বেহাতেই রয়ে গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সেই সময় অর্থাৎ ৫ বা ৬ ফেব্রুয়ারিতেই যদি গোপনীয়তা রক্ষা না করে সরকারের মাধ্যমে ফিলিপাইন সরকারের কাছে বিষয়টি উত্থাপন করা যেত, সেক্ষেত্রে যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে ফান্ড হস্তান্তর ঠেকানো সম্ভব হতো। পরিতাপের বিষয়, এমন কোনো উদ্যোগই তখন নেওয়া হয়নি।
আশার কথা, অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর দুদক থেকে রিজার্ভ চুরির ঘটনা তদন্তে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমরা মনে করি, এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া উচিত। এর সঙ্গে জড়িত সবাইকে দ্রুত আইনের আওতায় আনাও জরুরি। রিজার্ভ চুরির ঘটনা বাংলাদেশের জন্য শিক্ষণীয়, এতে কোনো সন্দেহ নেই। ভবিষ্যতে যাতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সে ব্যাপারে কর্তৃপক্ষকে সজাগ থাকতে হবে। পাশাপাশি কর্তৃপক্ষ চুরি যাওয়া বাকি অর্থ ফেরত আনার ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে, এটাই প্রত্যাশা।