Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

অনুদানের টাকা নয়ছয়: দুর্নীতি রোধে কোনো আপস নয়

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

অনুদানের টাকা নয়ছয়: দুর্নীতি রোধে কোনো আপস নয়

বিগত সরকারের শাসনামলে বিভিন্ন প্রকল্পে যে ভয়াবহ দুর্নীতি হয়েছে, তা আজ কারও অজানা নয়। তবে সেই ধারাবাহিকতায় ছেদ কি পড়েছে? সোমবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ- শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীন ‘সোশ্যাল প্রোটেকশন ফর দি ওয়ার্কারস ইন দ্য টেক্সটাইল অ্যান্ড লেদার সেক্টর’ (এসওএসআই) প্রকল্পের অনুদানের টাকা নিয়ে রীতিমতো নয়ছয়ের আয়োজন করা হয়েছে। জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে জার্মান উন্নয়ন সংস্থার (জিআইজেড) দুবছর মেয়াদি এ প্রকল্পে প্রায় ৮৩ কোটি টাকা দেওয়া হবে।

জানা যায়, ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে শুরু হয়ে ২০২৬ সালের ডিসেম্বরে শেষ হতে যাওয়া প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর। প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য টেক্সটাইল ও লেদার সেক্টরের ৫০ জন শ্রমিকের দক্ষতা বৃদ্ধি করে পুনর্বাসন করা। এছাড়া পোশাক ও লেদার সেক্টরে কর্মরত শ্রমিকদের কেউ আহত হলে তাদের জন্য সামাজিক বিমা চালুর পদ্ধতি প্রস্তুত করা, জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থার উপায় বের করা, এসব শ্রমিককে দুর্ঘটনা ঝুঁকিমুক্ত রাখতে পলিসি বা নীতিমালা প্রণয়ন করা এবং শ্রমিক পরিবারে মাতৃত্বকালীন সুবিধা, বেকার শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা, অসুস্থতায় চিকিৎসাসহ বৃদ্ধ বয়সে শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ানোর উপায় বের করা এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য। অথচ যাদের জীবনমান উন্নয়নে এ প্রকল্পে অর্থ দেওয়া হচ্ছে, সেই শ্রমিকদের জন্য ব্যয় করা হবে মাত্র ২৫ লাখ টাকা। অর্থাৎ গড়ে মাথাপিছু ব্যয় হবে ৫০ হাজার টাকা। বাকি টাকার বেশিরভাগ জুড়ে আছে ইচ্ছামাফিক আয়োজন। যেমন, দেশি-বিদেশি পরামর্শকদের পেছনে ব্যয় করা হবে প্রায় ২৫ কোটি টাকা। দুবছর মেয়াদি প্রকল্পের জন্য অফিস ভাড়া বাবদ মাসে প্রায় ৬ লাখ টাকা খরচের পাশাপাশি প্রকল্পের কার্যক্রম ত্বরান্বিত করতে ৩১৫ জন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরামর্শকের সেবাগ্রহণ, ৫টি অনুদান চুক্তি, ৮৭টি ওয়ার্কশপ ও সেমিনার করা হবে। এছাড়া ৬টি সফটওয়্যার, ৩৫টি কম্পিউটার, ৩৫টি কম্পিউটার সফটওয়্যার, ১৮টি অফিস সরঞ্জাম এবং ৫৬টি আসবাবপত্র কেনার প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ১২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত বিশেষ প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভায় এটির বিষয়ে পর্যালোচনাকালে ব্যয়ের চিত্র দেখে সভায় উপস্থিত কর্মকর্তাদের অনেকে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। এ ধরনের প্রকল্পে এভাবে অর্থ ব্যয়ের মাধ্যমে প্রকৃত লক্ষ্য অর্জন করা কখনো সম্ভব হবে না বলেও মত দেন অনেকে। এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে আলোচ্য প্রকল্পের পর্যালোচনা সভার সভাপতি পরে জানিয়েছেন, প্রকল্পের সব খাতের ব্যয় যৌক্তিক পর্যায়ে কমিয়ে আনার সুপারিশ করা হচ্ছে।

এ প্রকল্পের খরচ যারা নির্ধারণ করেছেন, তাদের উদ্দেশ্য যে ভালো নয়, তা বলাই বাহুল্য। দেশ যখন দুর্নীতিমুক্ত হওয়ার লক্ষ্যে ধাবিত হয়েছে, তখন প্রকল্প ব্যয়ের প্রস্তাবনার এমন চিত্র স্বাভাবিকভাবেই সে উদ্দেশ্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। তাই শুধু এ প্রকল্পই নয়, সব প্রকল্পের বিষয়েই অবিলম্বে পুনর্মূল্যায়নের উদ্যোগ নেওয়া জরুরি বলে মনে করি আমরা। সমাজ ও রাষ্ট্রের স্বার্থেই তা করা দরকার। কারা এ ধরনের ব্যয় নির্ধারণ করেছে, তাদেরও চিহ্নিত করতে হবে। দুর্নীতি রোধে কোনো আপস করা চলে না, কারণ দেশবাসীর জীবনমানের উন্নয়নের সঙ্গেও এর একটা বড় সম্পর্ক রয়েছে। দুর্নীতি প্রতিরোধে যা যা করণীয়, এর সবই অন্তর্বর্তী সরকার করবে, এটাই প্রত্যাশা।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম