প্লাস্টিক বোতলের ভয়াবহতা, পরিবেশের ক্ষতি ও স্বাস্থ্যঝুঁকির বিচারে পরিত্যাজ্য
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ফাইল ছবি
বাজারে বিক্রি হওয়া প্লাস্টিকের বোতলের পানি বিশুদ্ধ-এ বিশ্বাসে তা পান করেননি, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। সাম্প্রতিক এক গবেষণা বলছে, দেশে প্রায় ৮৩ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ (১৫ কোটি ৪ লাখ ৮০ হাজার) প্রতিনিয়ত একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বোতলে পানি পান করে। উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, প্লাস্টিক বোতলে থাকা পানি স্বাস্থ্যের জন্য বুমেরাং হয়ে উঠতে পারে। এ বোতল থেকে নির্গত বিসফেনল এ (বিপিএ) নামক রাসায়নিক পদার্থ শরীরের হরমোন সিস্টেমে বিঘ্ন সৃষ্টি এবং দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য সমস্যা থেকে শুরু করে ক্যানসারের আশঙ্কাও তৈরি করতে পারে। গবেষণা বলছে, প্লাস্টিক বোতলের অতিরিক্ত ব্যবহারে নালা বন্ধ হয়ে যাওয়া, রাসায়নিক উপাদান মিশ্রিত জলপথ ও মাইক্রোপ্লাস্টিকের মাত্রা বাড়ছে। এসব কারণে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশ। গবেষকরা বলছেন, পলিথিন টেরেফথ্যালেট (পিইটি) দিয়ে তৈরি এসব বোতল প্রায় ৪৫০ বছর পর্যন্ত অবিকৃত অবস্থায় থাকে। ধীরে ধীরে এগুলো ভেঙে মাইক্রোপ্লাস্টিকে রূপান্তরিত হয় এবং তা থেকে ক্ষতিকর রাসায়নিক নির্গত করে। ভয়াবহ ব্যাপার হচ্ছে, এ বিষাক্ত পদার্থ মানুষের বাস্তুতন্ত্রে খাদ্যশৃঙ্খলেও (ফুড চেইন) জায়গা করে নিচ্ছে।
উল্লেখ্য, সত্তরের দশকে আমাদের দেশে যেসব পণ্য কাঁচের বোতলে বিক্রি হতো, সেসবের অধিকাংশই এখন প্লাস্টিকের বোতলে বিক্রি হচ্ছে। কাঁচের বোতল ভঙ্গুর ও তুলনামূলকভাবে প্লাস্টিকের চেয়ে দামি হওয়ায় ব্যবসায়ীরা এদিকে ঝুঁকছেন। একটা সময় ছিল যখন শহর তো বটেই, গ্রাম-বাংলার ঘরে ঘরে চীনামাটি বা টিনের থালার কদর ছিল। ছিল কাঁসা, পিতল, অ্যালুমিনিয়ামের ঘটি-বাটি। ছিল ধাতব গামলা, বালতি, লোটা, মগ, বদনার ব্যবহার। কিন্তু গত তিন-চার দশকের মধ্যে এসবের জায়গা দখল করেছে প্লাস্টিকের সামগ্রী। প্লাস্টিক পরিবেশের পাশাপাশি মানবদেহেও এমনভাবে মিশে যাচ্ছে যে, তা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করছে।
প্লাস্টিক যে কেবল ভূ-ভাগেই বিড়ম্বনা বাড়াচ্ছে তা নয়, সাগর-মহাসাগরে প্রতিনিয়ত জমছে প্লাস্টিক-বর্জ্য। খাদ্য ভেবে ভুল করে তা খাচ্ছে হাঙর, তিমি, ব্যারাকুডার মতো প্রাণী। প্লাস্টিকের দূষণ রোধে সচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি তাই কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। সরকারকে প্লাস্টিকের উৎপাদন অবশ্যই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। প্লাস্টিকপণ্য যেখানে-সেখানে না ফেলার বিষয়েও কঠোর হতে হবে। প্লাস্টিক বা পলিথিনের উপযুক্ত বিকল্প উদ্ভাবন করতে হবে। সরকার প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহার বন্ধে যে উদ্যোগ নিয়েছে, তা বাস্তবায়ন করতে হবে। একইসঙ্গে সবাইকে প্লাস্টিকসামগ্রীর ওপর নির্ভরতা কমাতে হবে।