Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

ইজতেমার মাঠে সংঘর্ষ

শান্তিপূর্ণ আয়োজন নিশ্চিত করা জরুরি

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ২০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ইজতেমার মাঠে সংঘর্ষ

গাজীপুরের টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমার মাঠ দখলকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৩টায় তুলকালাম কাণ্ড ঘটেছে। যুগান্তরে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, তাবলিগের জুবায়ের ও সাদপন্থিদের মধ্যে বিরোধের জের ধরে দুপক্ষের সংঘর্ষে তিনজন মুসল্লি নিহত ও শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন।

অবশ্য স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা চারজন নিহত হওয়ার কথা জানিয়েছেন। এ সংঘর্ষের ঘটনার পর বুধবার দুপুরে ইজতেমা মাঠসহ আশপাশের তিন কিলোমিটার এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী, বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশসহ সশস্ত্র বাহিনীর প্রায় এক হাজার সদস্য মোতায়েন করা হয়। বিকাল থেকে মুসল্লিরা ইজতেমা মাঠ ত্যাগ করতে থাকেন।

বিশ্ব ইজতেমার ৪২ দিন আগে জোড় ইজতেমায় এ সহিংস ঘটনা হতবাক করেছে ধর্মানুরাগীদের। ইসলাম শান্তির ধর্ম। এ ধর্মের একটি অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে এমন ঘটনা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এ ঘটনা আসন্ন বিশ্ব ইজতেমায় মুসল্লিদের আগমনকে নিরুৎসাহিত করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকেই। তাই বিশ্ব ইজতেমাকে সর্বাত্মক শান্তিপূর্ণ করার জন্য উভয় পর্বেই বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলে মনে করি আমরা।

বিশ্ব ইজতেমায় প্রতিবছর তাবলিগ জামাতের নিবেদিতপ্রাণ কর্মীরা একত্রিত হন। পারস্পরিক ভাব ও ধর্মীয় জ্ঞান বিনিময় করেন। সারা বছরের কর্মপন্থা নির্ধারণ করেন এবং মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে ইসলাম প্রচারের কাজে পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েন। তবে সময়ের পরিক্রমায় বিশ্ব ইজতেমা বর্তমানে আর তাবলিগ কর্মীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। ইজতেমা আজ পরিণত হয়েছে সর্বস্তরের ধর্মপ্রাণ মুসলমানের সমাবেশে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমানের ঢল নামে ইজতেমায়। পবিত্র হজের পর মুসলিম সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় সমাবেশ এই বিশ্ব ইজতেমা। এ কারণে মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমাবেশ বলে পরিচিত এটি। ইজতেমায় বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ কামনা করে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা হয়। দেশ-বিদেশের আলেমরা তাদের বয়ানে ইসলামের মর্মবাণী তথা মানবিক আদর্শ ও ভ্রাতৃত্ববোধের দিকগুলো তুলে ধরেন। তাই প্রতিবছর মুসল্লিরা ইজতেমার জন্য অপেক্ষা করে থাকেন। এমন একটি ধর্মীয় সমাবেশের পবিত্রতা ও যথাযথ ভাবগাম্ভীর্য বজায় রাখা জরুরি।

আগে বিশ্ব ইজতেমা এক পর্বে অনুষ্ঠিত হলেও মতভেদের কারণে দুই পক্ষ বিশ্ব ইজতেমা দুই পর্বে করার সিদ্ধান্ত নেয়। গত কয়েক বছর ধরে এভাবেই অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে ইজতেমা। তবে বিশ্ব ইজতেমায় বিভক্তি কাম্য নয়। মানুষকে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করাই ইসলামের শিক্ষা। কাজেই ইজতেমার আয়োজন নিয়ে কোনো ধরনের বিরোধ বা বিভক্তি থাকবে না, এটাই আমরা দেখতে চাই।

বাংলাদেশে নিয়মিত বিশ্ব ইজতেমা আয়োজনের ফলে ইসলাম ধর্মের অনেক মৌলিক শিক্ষা সর্বস্তরের মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। ঈমান, আমল ও ইলম অর্জন এবং আত্মশুদ্ধিতে এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। ইজতেমা শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হবে এবং এ আয়োজন সবার জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে; মানুষের ভেতর থেকে হিংসা-হানাহানি দূর হয়ে পৃথিবীতে শান্তির অমিয়ধারা প্রবাহিত হবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম