নাব্য সংকটে পায়রা বন্দর
ড্রেজিংয়ের সুফল মিলছে না কেন?
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
পায়রা সমুদ্রবন্দরের অবকাঠামো নির্মাণ ও ড্রেজিংয়ের পেছনে বিপুল অঙ্কের অর্থ ব্যয় করা হলেও বাস্তবে এসবের সুফল মিলছে না। নাব্য সংকটের কারণে মালবাহী সমুদ্রগামী বিদেশি বড় জাহাজ এ বন্দরে ভিড়তে পারছে না। সমুদ্র উপকূল থেকে এ বন্দরে যাতায়াতের একমাত্র নৌপথ রাবনাবাদ চ্যানেলের অনেক স্থানের গভীরতা কমতে কমতে বর্তমানে মাত্র ৫ দশমিক ৪ মিটার বা ১৮ ফুটে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থায় জোয়ারের সময় মাত্র ১৪-১৫ হাজার টন কয়লাবাহী বিদেশি জাহাজ চলাচল করতে পারছে। পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা সম্প্রতি এক বৈঠকে এ তথ্য জানান। দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে পলি জমে এই চ্যানেলের গভীরতা আরও কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সাধারণত সমুদ্রবন্দরে কমবেশি ৪০ হাজার টন পণ্যবাহী বিদেশি জাহাজ যাতায়াত করে থাকে। এ বিবেচনায় সমুদ্রবন্দর হিসাবে কার্যকারিতা হারাচ্ছে পায়রা।
ভৌগোলিক অবস্থান, অবকাঠামো ও যন্ত্রপাতির সংকটসহ বিভিন্ন কারণে এ বন্দরে বিদেশি জাহাজ আসার আগ্রহ দেখাচ্ছে না। পায়রা সমুদ্রবন্দরের অবকাঠামো নির্মাণ ও ড্রেজিং বাবদ বিপুল অঙ্কের অর্থ ব্যয় হলেও ব্যয়ের বিপরীতে চালুর পর থেকে গত ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ আয় করেছে ভ্যাটসহ মাত্র ৩৯৩ কোটি ৮২ লাখ ৫১ হাজার টাকা। এ বন্দরে ব্যয় হওয়া বিনিয়োগ আদৌ উঠে আসবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয় ও পায়রা বন্দরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। সমুদ্রের ৭৫ কিলোমিটার ভেতরে টার্মিনাল নির্মাণ করা হয়েছে। এত বড় চ্যানেলে নাব্য ধরে রাখার কাজটি বড় এক চ্যালেঞ্জ। নাব্য ধরে রাখতে আগামীতেও বিপুল অঙ্কের অর্থ ব্যয় করতে হবে। এ সমুদ্রবন্দরের অবকাঠামোসহ ড্রেজিংয়ের ক্ষেত্রে যাতে কোনোরকম দুর্নীতি না হয়, সেদিকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে। ড্রেজিংয়ের নামে যাতে অপচয় না হয়, তাও নিশ্চিত করা দরকার। বিপুল অঙ্কের অর্থ ব্যয় করে পায়রা সমুদ্রবন্দরের অবকাঠামো নির্মাণ এবং ড্রেজিং করা হলেও কেন এ থেকে কাঙ্ক্ষিত সুফল মিলছে না, তা খতিয়ে দেখা দরকার। গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এ চ্যানেল ড্রেজিংয়ে যে বিপুল অঙ্কের অর্থ ব্যয় হয়েছে, তা থেকে কী পরিমাণ লুটপাট হয়েছে, সে প্রশ্নও বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। অতীতে ড্রেজিংয়ের ক্ষেত্রে কেউ দুর্নীতি করে থাকলে তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা দরকার।