সরকারি চাকরি আইন ২০১৮
এক্ষেত্রেও সংস্কার জরুরি
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
২০১৮ সালে দেশে ‘সরকারি চাকরি আইন ২০১৮’ প্রণীত হয়েছিল। এ আইন সরকারি চাকরিজীবীদের জবাবদিহির আওতায় আনার একটা উদ্যোগ বলে প্রচার করা হলেও আইনটির কিছু অংশ ছিল তাদের রক্ষাকবচ। আইনের চারটি ধারা, যথাক্রমে ৩৯(১), ৪০, ৪১ ও ৪২(২) সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অতিমাত্রায় স্বাধীনতা ও স্বেচ্ছাচারিতা নিশ্চিত করেছে। আইনের এ দুর্বলতার সুযোগে তারা নানা ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতিতে উৎসাহিত হয়েছেন। আইনের ধারাগুলোয় বলা হয়েছে : কেউ বিদেশি কোনো রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব গ্রহণের ফলে চাকরি হারালেও বিভাগীয় মামলা হবে না; জেলে গিয়ে জামিন পেলে কেউ চাকরি থেকে বরখাস্ত হবে না; ফৌজদারি মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র গৃহীত হওয়ার আগে সরকারি অনুমতি ছাড়া কাউকে গ্রেফতার করা যাবে না এবং এক বছরের কম কারাদণ্ড হলে কারও চাকরি যাবে না। অন্য কোনো দেশের সরকারি চাকরিজীবীদের এমন সুরক্ষা দেওয়া নেই সম্ভবত। বুঝতে অসুবিধা হয় না, গত রেজিম খুব ঠান্ডা মাথায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিজেদের পক্ষে রাখার জন্যই রাষ্ট্র ও জনগণের স্বার্থ উপেক্ষা করে এ বন্দোবস্ত করেছিল।
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী মানে জনগণের সেবক। তারা স্বেচ্ছাচার করে যা খুশি তা-ই করতে পারেন না। কিন্তু গত রেজিমে দেখা গেছে, তাদের অনেকেই কিছু রক্ষাকবচ পেয়ে জনগণের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে নিজেদের আখের গুছিয়েছেন। তাদের এ আশকারা দেওয়াটা ছিল গত রেজিমের চরম অন্যায়। জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানের অন্যতম লক্ষ্য ছিল জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠা করা। লক্ষ করা গিয়েছিল, আমলাতন্ত্র ও পুলিশ প্রশাসনের অনেকেই গত রেজিমকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টার বিনিময়ে অবৈধ সম্পদ গড়েছেন। জনগণের শাসন নিশ্চিত করতে এবং সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জবাবদিহির আওতায় আনার লক্ষ্যে আইনের উপর্যুক্ত ধারাগুলো বাতিলের প্রশ্ন উঠেছে জোরালোভাবে। রাষ্ট্রের যে কেউ, তা তিনি যত উচ্চ পদাধিকারী হোন না কেন, যেন স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত ক্ষমতা প্রদর্শন করতে না পারেন, সে লক্ষ্যেই আইন প্রণীত হওয়া উচিত। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংস্কারের যে কর্মসূচি হাতে নিয়েছে, তার অংশ হিসাবে ‘সরকারি চাকরি আইন ২০১৮’-এর সংস্কার জরুরি। আইনটির এমন সংস্কার করতে হবে, যাতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যথাযথভাবে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসাবে জনগণের সেবা করতে পারেন; একইসঙ্গে তারা যেন অনিয়ম ও দুর্নীতি করার উৎসাহ না পান, সে ব্যবস্থাও করতে হবে।