পররাষ্ট্র উপদেষ্টার ব্রিফিং
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অটুট রাখাই কাম্য

সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলায় সোমবার বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির জাতিসংঘের শান্তিসেনা পাঠানোর প্রস্তাবে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ হয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন এর বিরুদ্ধে বিবৃতি দিয়েছে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন ঢাকায় কর্মরত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের কাছে বিদ্যমান পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেছেন, বাংলাদেশি হিন্দুদের নিয়ে ভুল ধারণা তৈরি করছে ভারতীয় গণমাধ্যমের একাংশ। বাংলাদেশ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী কেন এমন বক্তব্য দিলেন, তা বোধগম্য নয় বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন। তিনি বাংলাদেশবিরোধী বৈশ্বিক প্রচারণা চলছে বলেও অভিযোগ করেন। বিদ্যমান পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে বাংলাদেশে কোনো ধরনের সাম্প্রদায়িক কার্যকলাপ চালানো হলে তা বরদাশত করা হবে না বলে তিনি সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। পররাষ্ট্র উপদেষ্টার এ ব্রিফিং সময়োপযোগী।
বস্তুত ভারতের একশ্রেণির গণমাধ্যম বাংলাদেশে ‘সংখ্যালঘু নির্যাতন’-এর মিথ্যা অভিযোগ তুলে যে প্রচারণা চালাচ্ছে, তা অত্যন্ত স্পর্শকাতর। এ থেকে ফায়দা নেওয়ার জন্য সুযোগসন্ধানীরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার চেষ্টা চালাতে পারে। বাংলাদেশ বরাবরই একটি ধর্মীয় সম্প্রীতির দেশ। এখানে সব ধর্মের মানুষ দীর্ঘকাল ধরে পাশাপাশি শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করে আসছে।
এ অবস্থায় কেউ বা কোনো গোষ্ঠী যাতে এ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে বিনষ্ট করতে না পারে, সে ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক ও সজাগ থাকতে হবে। এ ব্যাপারে সরকারের যেমন বিশেষ দায়িত্ব রয়েছে, তেমনই রয়েছে সাধারণ মানুষেরও। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার তৎপরতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সরকারের পক্ষ থেকে সব ধর্মের নেতাদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া যেতে পারে, যারা লক্ষ রাখবেন কেউ যেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ক্ষুণ্ন করতে না পারে, সেদিকে। কোনো মহল থেকে সংখ্যালঘু নির্যাতনের মিথ্যা অভিযোগ তোলা হলে সেক্ষেত্রেও এ কমিটি দেশ ও বিশ্বের কাছে প্রকৃত তথ্য তুলে ধরতে পারবে। এটি সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে বলে মনে করি আমরা।
ভারত আমাদের নিকটতম প্রতিবেশী রাষ্ট্র। পারস্পরিক স্বার্থ ঠিক রেখে সবসময় দেশটির সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চাই আমরা। প্রত্যাশা করি সৎ প্রতিবেশীসুলভ আচরণের। বলার অপেক্ষা রাখে না, আগরতলায় বাংলাদেশ মিশনে হামলা ও ভাঙচুর এবং জাতীয় পতাকা নামিয়ে ছিঁড়ে ফেলার ঘটনা কূটনৈতিক শিষ্টাচারের পরিপন্থি।
এছাড়া পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি কর্তৃক ঢাকায় জাতিসংঘের শান্তিসেনা পাঠানোর প্রস্তাব একটি স্বাধীন দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি অবজ্ঞাস্বরূপ। এ ধরনের ঘটনা ও বক্তব্য দুদেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে তিক্ততার জন্ম দিতে পারে, যা কাম্য নয়। অপরদিকে এর জেরে দেশের জনগণের মাঝে সৃষ্ট ক্ষোভ ও উত্তেজনা যেন কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার জন্ম না দেয়, সে ব্যাপারেও সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সবাই শুভবুদ্ধির পরিচয় দেবে, এটাই কাম্য।