অর্থ পাচারের তথ্য সংগ্রহ
ফেরত আনার উদ্যোগ সফল হোক
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বিগত সরকারের আমলে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ ও সুবিধাভোগী অবৈধভাবে উপার্জিত বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার করেছে। এ নিয়ে গত সরকারের আমলে অনেক আলোচনা হলেও বাস্তবে পাচার রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
জানা যায়, ১৫ বছরে বিদেশে পাচার হওয়া মোটা অঙ্কের অর্থ দেশে ফেরত আনতে কাজ করছে একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন টাস্কফোর্স। বিষয়টি স্বস্তিদায়ক। প্রথম ধাপেই টাস্কফোর্স জালে তুলেছে বেশকিছু ‘রুই-কাতলা’। এক ডজন নামকরা শিল্পগ্রুপ ও সাবেক এক মন্ত্রীর অর্থ পাচারের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়েছে।
দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান সম্প্রতি এক সেমিনারে বলেছেন, আওয়ামী লীগ শাসনামলে বছরে ১২ থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলার পাচার করা হয়েছে। এ হিসাবে ১৫ বছরে পাচার হয়েছে ২২৫ বিলিয়ন ডলার; অর্থাৎ ২৭ লাখ কোটি টাকা।
দেশের অর্থনীতির ওপর শ্বেতপত্র তৈরির জন্য গঠিত কমিটির চূড়ান্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৫ বছরে পাচার হয়েছে ২৩৪ বিলিয়ন ডলার। প্রতিবেদনটি ইতোমধ্যে প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দেওয়া হয়েছে।
টাস্কফোর্সের কার্যপরিধির মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ থেকে পাচারকৃত অর্থ বা সম্পদ চিহ্নিত করা ও তদন্তে সংশ্লিষ্ট পক্ষকে সহযোগিতা দেওয়া, পাচারকৃত সম্পদ উদ্ধারে দায়ের করা মামলাগুলোর কার্যক্রম দ্রুত শেষ করার ক্ষেত্রে বাধা চিহ্নিত করা এবং তা দূর করার উদ্যোগ গ্রহণ, বিদেশে পাচারকৃত সম্পদ বাংলাদেশে ফেরত আনার উদ্যোগ নেওয়া। যেহেতু টাস্কফোর্সের কার্যপরিধি অনেক বড়, সেহেতু সার্বিক কর্মকাণ্ডে সমন্বয়ের ক্ষেত্রে যাতে জটিলতা সৃষ্টি না হয় সেদিকেও কর্তৃপক্ষকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে।
এগমন্ট গ্রুপের সদস্য হিসাবে বাংলাদেশ এ গ্রুপের অন্য সদস্যদের কাছ থেকে অর্থ পাচারবিষয়ক সব তথ্য পাওয়ার অধিকার রাখে। গত সরকারের আমলে এ সুবিধা কখনো নেওয়া হয়নি। এখন সে সুবিধা নেওয়া হলে আশা করা যায় সুফল পাওয়া যাবে। বাংলাদেশের বিদ্যমান মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ অনুযায়ী বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি করে সেদেশের কাছ থেকে অর্থ পাচার সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় তথ্য চাওয়ার সুযোগও রয়েছে। বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি অর্থ পাচারকারীদের যারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করেছে, তাদেরও দ্রুত আইনের আওতায় আনা দরকার। আবার যাতে অর্থ পাচার না হয়, সেজন্যও উদ্যোগ নিতে হবে।