দূষণের শিকার কক্সবাজার
কর্তৃপক্ষের কঠোর পদক্ষেপ কাম্য
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
পর্যটন নগরী কক্সবাজার আজ ভয়াবহ পরিবেশ দূষণের শিকার। এ নগরীতে রয়েছে অপরিকল্পিত স্থাপনার চাপও। শুক্রবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ, পর্যটকদের আবাসনের জন্য গড়ে ওঠা পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল-কটেজের মধ্যে স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (এসটিপি) আছে হাতেগোনা কয়েকটি হোটেলে। বাকি হোটেল-মোটেলগুলোতে এই গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো না থাকায় সেখানে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে ভয়াবহ মাত্রায়।
জানা যায়, পরিবেশ রক্ষার জন্য ১৯৯৯ সালে সমুদ্র তীরবর্তী এলাকাকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করা হয়। এই গেজেট অনুযায়ী, সৈকতের বেলাভূমিতে স্থাপনা নির্মাণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তবে প্রশাসনের নজরদারির অভাব ও নিয়ম লঙ্ঘনের প্রবণতায় ইসিএ আইন কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। বরং কক্সবাজারের কলাতলী, লাবণী পয়েন্টসহ বিভিন্ন স্থানে অপরিকল্পিতভাবে হোটেল-মোটেল ও রেস্তোরাঁ গড়ে উঠেছে। এসব স্থাপনার বেশিরভাগই এসটিপি ছাড়াই চালু রয়েছে, যা ভয়াবহ পরিবেশ দূষণের কারণ হয়ে উঠেছে।
পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভরা মৌসুমে প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক পর্যটক কক্সবাজারে অবস্থান করেন; কিন্তু এসটিপি না থাকায় তাদের বর্জ্য সাধারণ টয়লেট রিংয়ে জমা হয়। সেখান থেকে তা নালার মাধ্যমে সরাসরি নদীতে চলে যায়।
দেশি-বিদেশি পর্যটকরা প্রকৃতির নির্মল পরিবেশ উপভোগ করতে কক্সবাজারে ভ্রমণ করেন। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, পরিবেশ দূষণ ও অপরিকল্পিত স্থাপনার কারণে পর্যটন নগরীর প্রকৃতি তার আকর্ষণ হারাচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যে হোটেলগুলো দুই দশক আগে নির্মিত, সেগুলোতে এসটিপি নেই। কিন্তু নতুনভাবে গড়ে ওঠা হোটেল-মোটেলেও এসটিপি স্থাপনের কোনো উদ্যোগ নেই। নতুন স্থাপনায় নেই কোনো পরিবেশবান্ধব ব্যবস্থা। এসব ভবন থেকে নির্গত বর্জ্য সরাসরি নালা হয়ে নদী ও সাগরে মিশে দূষণ ছড়াচ্ছে। ফলে পরিবেশের পাশাপাশি সমুদ্রের জীববৈচিত্র্যও হুমকির মুখে পড়ছে।
দূষণের কারণে কেবল সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্যই নষ্ট হচ্ছে না, পর্যটকদের কাছে কক্সবাজারের আকর্ষণও যাচ্ছে কমে। প্রশাসনিক নজরদারির অভাবে দখলদাররা যেভাবে আইনি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইচ্ছামতো স্থাপনা গড়ে তুলছে, তা অবিলম্বে বন্ধ করা দরকার বলে মনে করি আমরা। একইসঙ্গে যেসব স্থাপনা এরই মধ্যে গড়ে উঠেছে, সেসবের ব্যাপারেও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। এছাড়া মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেওয়া বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাও পরিবেশ দূষণের জন্য দায়ী। কাজেই তাদের দ্রুত প্রত্যাবাসনের পাশাপাশি কক্সবাজারের সব স্থাপনায় পরিবেশবান্ধব সংস্কার ও বাধ্যতামূলক এসটিপি স্থাপনে উদ্যোগী হবে কর্তৃপক্ষ, এটাই প্রত্যাশা।