ওষুধের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি, অতি মুনাফার প্রবণতা রোধ করা উচিত
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে ওষুধের দামও লাগামহীনভাবে বাড়ছে। ফলে জীবন রক্ষার জন্য দ্বিগুণ-তিনগুণ দামে হলেও ওষুধ কিনতে বাধ্য হচ্ছে মানুষ। শনিবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ, আর্থিক সংকটে যেখানে সাধারণ মানুষের তিনবেলা আহারের জোগান দেওয়াই কষ্টকর, সেখানে অনেককে কাটছাঁট করে হলেও দরকারি ওষুধ কিনতে হচ্ছে। এতে করে যে রোগের জন্য রোগী ওষুধ নিচ্ছেন, সেটিরও কোনো সুফল মিলছে না। তার ওপর নকল ওষুধের দৌরাত্ম্য তো আছেই। দেশ যখন ওষুধ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ-মাত্র ২ শতাংশ ওষুধ আমদানি করতে হয়-তখন দেশে উৎপাদিত ওষুধের দামও চলে যাচ্ছে নাগালের বাইরে।
জানা যায়, ২০২০ সালের পর থেকে গত চার বছরে দেশে তৈরি ও আমদানিনির্ভর প্রায় ৯০ শতাংশ ওষুধের দাম বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা কাঁচামাল আমদানি, বিশ্ববাজারে ডলার ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির দোহাই দিয়ে ওষুধের বাড়তি দাম চাপিয়ে দিচ্ছে ক্রেতা বা রোগীর ওপর। নিয়ন্ত্রক সংস্থা ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর এক্ষেত্রে তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না। উল্লেখ্য, দেশে বর্তমানে ৩১০টি নিবন্ধিত ওষুধ উৎপাদনকারী কোম্পানি রয়েছে। ৫৮টি কোম্পানি দেশে তৈরি ওষুধ ১৫৭টি রাষ্ট্রে রপ্তানি করছে। স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দেশে উৎপাদিত ওষুধ বিদেশে রপ্তানি করে ব্যবসায়ীরা মুনাফা অর্জন করছেন; এরপরও বিভিন্ন অজুহাতে স্থানীয় বাজারে নিয়মিত দাম বাড়াচ্ছেন; ফলে চিকিৎসা ব্যয় মেটাতেই প্রতিবছর ৬১ লাখ ৩০ হাজার মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাচ্ছে।
পরিতাপের বিষয়, ওষুধের মান ও মূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের কোনো সংস্থার তরফেই তদারকি দৃশ্যমান নয়। বরং উদ্বেগের বিষয় হলো, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের যোগসাজশে গত এপ্রিল মাসে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে বেশকিছু কোম্পানি ৭ থেকে ১৪০ শতাংশ পর্যন্ত তাদের ওষুধের দাম বাড়িয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমনকি অস্বাভাবিকভাবে দাম বৃদ্ধি বন্ধে হাইকোর্টের রুল জারি সত্ত্বেও সুফল মেলেনি। নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে ইচ্ছামতো দাম বাড়ানোর এ প্রবণতা অবিলম্বে বন্ধ হওয়া উচিত বলে মনে করি আমরা। এ বিষয়ে উৎপাদনকারী সব প্রতিষ্ঠানের যেমন দায়িত্ব রয়েছে, তেমনি সরকারেরও দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। বস্তুত ১৯৮২ সালের ওষুধ নীতি কঠোরভাবে অনুসরণ করা হলে রোগী ও উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান উভয়ের স্বার্থই রক্ষা পাবে। এ ব্যাপারে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নেবে, এটাই প্রত্যাশা।