ঢাকা এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প
এ ধীর গতির রহস্য কী?
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
রাজধানীর কাওলা থেকে কুতুবখালী রুটে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্পের কাজ ১৫ বছরেও শেষ হয়নি। যদিও বলা হয়েছিল, এ কাজ সাড়ে ৩ বছরে শেষ হবে। রোববার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ, বিদেশি তিন কোম্পানির অর্থনৈতিক জটিলতায় গত ৯ মাস ধরে এ প্রকল্পের কাজ বন্ধ রয়েছে। অবশ্য প্রকল্পসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, সব ধরনের জটিলতা নিরসন শেষে আগামী মাস থেকে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। জানা যায়, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বমূলক (পিপিপি) এ প্রকল্পের ৫১ শতাংশের মালিকানায় ছিল ইতালিয়ান থাই (ইতালথাই) ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানি। শুরু থেকেই কোম্পানিটির অর্থনৈতিক সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়। ফলে শুরুতে পুরো অংশের মালিকানা প্রতিষ্ঠানটির হাতে থাকলেও পরে ৪৯ শতাংশ চায়নিজ দুটি কোম্পানির কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়।
ঢাকা শহরে যানজটের ভোগান্তি কমাতে ২০০৯ সালে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় বিগত সরকার। ২০১১ সালে এ প্রকল্প অনুমোদন পেলেও ২০১৭ সালে এর প্রাথমিক কাজ শুরু হয়। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে কাওলা থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার চালু করে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। দেখা গেছে, পিপিপি প্রকল্প হওয়ায় নির্মাতা প্রতিষ্ঠান যত্রতত্র র্যাম্প স্থাপন করেছে, যেটি শহরের জন্য নেতিবাচক হয়েছে। শহরকে বাইপাস করার কথা থাকলেও যত্রতত্র র্যাম্প করায় এক্সপ্রেসওয়ের পরিবর্তে তা যেন ফ্লাইওভারে পরিণত হয়েছে! কর্মব্যস্ত দিনের সকাল, বিকাল ও সন্ধ্যায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের র্যাম্পে তীব্র যানজট থাকে। র্যাম্প বা ওঠানামার পথে যানজট মাড়িয়ে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে উঠতেই অনেক সময় নষ্ট হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের দর্শন থাকে কোনো শহরকে বাইপাস করা অথবা দুটো বড় শহরের মধ্যে দূরত্ব কমানো। যাতে দ্রুত এক শহর থেকে অন্য শহরে যাতায়াত করা যায়। এটা নিচের সড়ক বা উড়াল পথ দু’ভাবেই ব্যবহার করা যায়। কিন্তু ঢাকা এলিভেটেড ‘বাইপাস’ না হয়ে যেন ‘ওপেন পাস’ হয়ে গেছে।
আর্থিক সক্ষমতা না থাকা সত্ত্বেও ইতালির ওই সংস্থাকে কেন কাজ দেওয়া হয়েছিল, এ প্রশ্নের সদুত্তর প্রয়োজন। উপযুক্ত প্রতিষ্ঠান বাছাইয়ে ব্যর্থতার দায় দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের (বিবিএ) সংশ্লিষ্ট কর্তাদের ওপরই যে বর্তায়, তা বলাই বাহুল্য। জনভোগান্তি রোধে সুষ্ঠুভাবে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ দ্রুততর সময়ের মধ্যে করার বিকল্প নেই। একইসঙ্গে এমন অদক্ষ ও অদূরদর্শী সিদ্ধান্ত গ্রহণের পেছনে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাটির কারা জড়িত ছিল, তারও তদন্ত হওয়া দরকার। এ প্রকল্পের নকশা ও কারিগরি বিভিন্ন দিক নিয়ে বিতর্ক অতীতেও উঠতে দেখা গেছে। সেক্ষেত্রে প্রকল্পকে ত্রুটিমুক্ত করে দ্রুত বাস্তবায়নে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, এটাই প্রত্যাশা।