সর্বাগ্রে দরকার ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা, তারল্য বাড়াতে বিকল্প পথ
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১২ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বিগত সরকারের আমলে অনিয়ম, দুর্নীতি এবং গ্রাহকের আস্থাহীনতায় তীব্র তারল্য সংকটে পড়ে দেশের ব্যাংক খাত। কয়েকটি ব্যাংকের অবস্থা হয়ে পড়ে খুবই নাজুক। সোমবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ, দুর্বল হওয়া ব্যাংকগুলোকে তারল্য সহায়তা দিয়ে সবল করতে বিকল্প পথের সন্ধান করছে সরকার। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে ব্যাংকগুলোর নিজস্ব উদ্যোগে আমানত সংগ্রহের দিকটিতে। জানা গেছে, এ লক্ষ্যে কয়েকটি ব্যাংক চড়া সুদে আমানত গ্রহণ করছে। বিদেশি ঋণ বা বিনিয়োগ নিয়েও তারল্য সংকট মোকাবিলার চেষ্টা করা হচ্ছে। এছাড়া কয়েকটি ব্যাংক প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স সংগ্রহ করে আমানত বাড়ানোর চেষ্টা করছে। করপোরেট গ্রাহক ও উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে বাড়তি আমানত সংগ্রহেরও চেষ্টা করা হচ্ছে। একইসঙ্গে বিশেষ গ্যারান্টিতে বন্ড ছেড়ে তহবিল সংগ্রহ করার জোর তৎপরতা চালাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এছাড়া বকেয়া বা খেলাপি ঋণ আদায়েও জোর তৎপরতা চালানো হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, কোনো ব্যাংক বন্ধ না করে বরং সংস্কার করে সেগুলোকে শক্তিশালী করা হবে। এজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে যেমন নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তেমনি ব্যাংকগুলোকেও বলা হয়েছে পদক্ষেপ নিতে। উল্লেখ্য, বিগত সরকারের আমলে জোরপূর্বক দখল করে নিয়ে ব্যাপক লুটপাট করায় নয়টি বেসরকারি ব্যাংক দুর্বল হয়ে পড়ে। সরকার পতনের আগে এসব ব্যাংককে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বিশেষ সহায়তা দেওয়া হতো। তা দিয়ে ব্যাংকগুলো দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনা করত। ৫ আগস্ট সরকারের পতন হলে নতুন গভর্নর দায়িত্ব নিয়ে সংকটে পড়া ব্যাংকগুলোকে টাকা ছাপিয়ে বা বিশেষ ছাড়ে সুবিধা দেওয়া বন্ধ করে দেন। এতে ব্যাংকগুলোয় তারল্য সংকট প্রকট আকার ধারণ করে। তারা আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে পারছিল না। এ অবস্থায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গ্যারান্টিতে ৫ ব্যাংককে ৫ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা ধার দেওয়া হয়েছে। এতে সুদের হার ধরা হয় ১১ থেকে ১২ শতাংশ। কিন্তু ব্যাংকগুলো নিজস্ব উদ্যোগে অন্য ব্যাংক থেকে ধার নিতে গেলে ১৪ শতাংশ পর্যন্ত সুদ দাবি করছে। এত সুদে আমানত নিয়ে ব্যাংক চালানো কঠিন বলে মনে করছেন ব্যাংকাররা। এ কারণে অন্য ব্যাংক থেকে ধার নিতে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে দুর্বল ব্যাংকগুলো। এ অবস্থায় ব্যাংকগুলো তারল্যের জোগান বাড়াতে বিকল্প পথের সন্ধান করছে।
অতীতে ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকট মোকাবিলায় যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তাতে সুফল মেলেনি। কাজেই শুধু তারল্যের জোগান বাড়াতে বিকল্প পথের সন্ধান করলেই হবে না, ব্যাংক খাতের চিহ্নিত সমস্যাগুলোর সমাধানেও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। ব্যাংকগুলোয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে সুশাসন। সুশাসনের মাধ্যমেই এ খাতে সব ধরনের অনিয়ম, দুর্নীতি, জালিয়াতি বন্ধ করা সম্ভব। পাশাপাশি খেলাপি ঋণ আদায়ে তৎপর হতে হবে। অর্থ পাচার রোধ ও তা ফেরত আনতে নিতে হবে কার্যকর ব্যবস্থা। আর এসব বিষয় নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর ভূমিকা কাম্য। কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া চলবে না। ব্যাংক খাত হলো দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি। এ খাত দুর্বল থাকলে সামগ্রিক অর্থনীতির ভিতও দুর্বল হতে বাধ্য। তাই ব্যাংক খাত রক্ষায় কঠোর হওয়ার বিকল্প নেই।