সাইবার আইন বাতিলের সিদ্ধান্ত: দূর হোক স্বাধীন মতপ্রকাশের বাধা
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
অবশেষে বিতর্কিত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল হচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে বৃহস্পতিবার এ ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। শুধু তাই নয়, এ আইনে চলমান মামলাগুলোও বাতিল হবে। উল্লেখ্য, বিতর্কিত এ আইন বাতিল নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছিল। গত ৩ অক্টোবর ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছিলেন, ‘অবশ্যই সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা উচিত। সরকার সেদিকেই যাবে।’ ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান আইনটি বাতিলের পাশাপাশি এ আইনে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের ন্যায্য ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে বিগত সরকার বিতর্কিত ‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন’ বদলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংসদে পাশ করে। নানা মহলের আপত্তির পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৩ সালে তা পরিবর্তন করে ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন’ নামে নতুন আইন পাশ করা হয়। পরিতাপের বিষয় হলো, নাম বদল হলেও আইনের ধারাগুলোয় খুব একটা পরিবর্তন আনা হয়নি। ফলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে বলা হয়, লোক দেখাতেই আইনটিতে শুধু কয়েকটি ধারা পরিবর্তন, সাজার পরিমাণ কমানো এবং জামিনযোগ্য ধারা বাড়ানো হয়েছে। আদতে মৌলিক অধিকার, মতপ্রকাশ ও বাকস্বাধীনতার ক্ষেত্রে আগের আইনের বিদ্যমান আশঙ্কার জায়গাগুলো রয়েই গেছে। আমরা তাই বারবার বলে এসেছি, এ আইন বাতিল করাই হবে মতপ্রকাশের বাধা দূর করার একমাত্র সমাধান। স্বভাবতই অন্তর্বর্তী সরকারের এ সিদ্ধান্তে বাকস্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ ও বাধা অনেকাংশে দূর হবে বলে মনে করি আমরা।
বস্তুত, ভার্চুয়াল জগতে ভুল তথ্যের প্রবাহ যাতে অবাধ না হয়, সেজন্য বিশ্বের অনেক দেশেই এ সম্পর্কিত আইন রয়েছে। কিন্তু বিশেষ কোনো গোষ্ঠীর সুবিধার জন্য তার অপব্যবহার ঘটেছে বলে শোনা যায় না। কাজেই আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করে সময়োপযোগী আইন প্রণয়নের প্রয়োজন রয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে সে রকম আভাসও মিলেছে। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট অংশীজনের মতামতের ভিত্তিতেই তা করা হবে, আশা করা যায়। সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলের পর কোনো কু-উদ্দেশ্যে কিংবা নিছক হয়রানির জন্য নয়, বরং বাকস্বাধীনতা ও তথ্য অধিকার নিশ্চিতে একটি মানসম্মত আইন প্রণয়নে অন্তর্বর্তী সরকার উদ্যোগী হবে, এটাই প্রত্যাশা।