স্থলবন্দরে অনিয়ম
রাজস্ব ফাঁকি ও চোরাচালান রোধ করতে হবে
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ছবি: সংগৃহীত
দেশের বিভিন্ন স্থলবন্দরে দুর্নীতি-অনিয়মের বিষয়টি অতীতে বারবার আলোচনায় এসেছে। তখন স্থলবন্দরগুলোয় দুর্নীতির উৎস চিহ্নিত করা হয়েছিল। সেসব প্রতিরোধে দুদকের পক্ষ থেকে অনেক সুপারিশ করা হলেও কেন কাঙ্ক্ষিত সুফল মেলেনি, তা খতিয়ে দেখা দরকার। যুগান্তরে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, নিষিদ্ধ পণ্য চোরাচালান, আমদানি-রপ্তানির পণ্য ওজনে কম দেখিয়ে রাজস্ব ফাঁকি, চাঁদাবাজি, চুরি-সবই চলে বেনাপোল স্থলবন্দরে। বস্তুত নাজুক নিরাপত্তাব্যবস্থা, নষ্ট স্ক্যানার, কার্গো হ্যান্ডলিংয়ে অদক্ষতা ও কারসাজি এবং যাত্রী টার্মিনালে অব্যবস্থাপনার সুযোগেই চলে এসব অনিয়ম। আমদানি-রপ্তানির মালামাল লোড-আনলোড করতে নিয়মের বাইরে প্রতিটি যানবাহন থেকে টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। স্ক্যানার অকেজো থাকায় বিভিন্ন পণ্যের মোড়ক এবং যানবাহনের বিভিন্ন স্থানে কুঠরি তৈরি করে চলে চোরাচালান। নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয় গঠিত উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। এসব দুর্নীতি ও অনিয়মের সঙ্গে যেসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান জড়িত, তাদের দ্রুত চিহ্নিত করা দরকার। প্রতিবেদনে অদক্ষ কার্গো হ্যান্ডলিং ব্যবস্থাপনা, যানজট, জলাবদ্ধতাসহ ১২ ধরনের ত্রুটি-অনিয়মের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, অব্যবস্থাপনা-অনিয়মের কারণে আমদানি-রপ্তানিকারকসহ সংশ্লিষ্টদের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। যাত্রীসেবার মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। দ্রুত এসব সমস্যার সমাধানে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।
বর্তমানে ২৪টি স্থলবন্দরের মধ্যে সচল রয়েছে ১৬টি। সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি ও যাত্রী যাতায়াতকারী বন্দরগুলোর অন্যতম যশোর জেলায় অবস্থিত বেনাপোল স্থলবন্দর। বেনাপোল বন্দর প্রথম শ্রেণির কেপিআইভুক্ত প্রতিষ্ঠান হলেও নিরাপত্তাব্যবস্থা নাজুক। কেপিআই নীতিমালা মানা হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখা দরকার। দেশের স্থলবন্দরগুলোর নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। বেনাপোল স্থলবন্দর ব্যবহার করে চোরাচালানের তথ্য পেয়েছে তদন্ত কমিটি। জানা যায়, যাত্রী টার্মিনালে স্থাপিত রাজস্ব বোর্ডের স্ক্যানারটি দীর্ঘদিন অকেজো। এ সুযোগে বিভিন্ন পণ্যের মোড়কে আসল পণ্য না এনে নিষিদ্ধ মালামাল বহন করা হয়। এছাড়া নানা কৌশলে বিভিন্ন যানবাহনে চোরাচালানের পণ্য পরিবহণ করা হয়।
বেনাপোলসহ দেশের সব স্থলবন্দরে চোরাচালান প্রতিরোধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। চোরাচালানের সঙ্গে হুন্ডির সম্পৃক্ততা রয়েছে। হুন্ডি প্রতিরোধে কাঙ্ক্ষিত সুফল পাওয়া না গেলে তা দেশের অর্থনীতির ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে। দেশের স্থলবন্দরগুলোর ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত ত্রুটি দূর করার পাশাপাশি হুন্ডি ও চোরাচালান বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। স্থলবন্দরগুলোয় দুর্নীতি-অনিয়মে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যারা জড়িত, তাদের সবাইকে দ্রুত আইনের আওতায় আনা দরকার।