Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারের উদ্যোগ

শর্ষের ভেতরের ভূতও তাড়াতে হবে

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ২৭ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারের উদ্যোগ

বিগত সরকারের আমলে অনেক রাজনীতিক, ব্যবসায়ীসহ সুবিধাভোগী শ্রেণি অবৈধভাবে উপার্জিত বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার করেছে। ওয়াশিংটনভিত্তিক আর্থিক খাতের গবেষণা সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটির (জিএফআই) তথ্য বলছে, বাংলাদেশ থেকে গড়ে প্রতিবছর পাচার হয়েছে ৭৫৩ কোটি ৩৭ লাখ ডলার বা ৮০ হাজার কোটি টাকা। এসব অর্থ গেছে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, কানাডা, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র, সুইজারল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাত, অস্ট্রেলিয়া, হংকং ও থাইল্যান্ডে। এ প্রেক্ষাপটে বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফেরত আনতে বেশকিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে রয়েছে মানি লন্ডারিং মামলা তদন্তে দুদককে অন্তর্ভুক্তকরণ, সরকারের কৌশলপত্র বাস্তবায়ন, ব্যাংকের সন্দেহজনক লেনদেন বিশ্লেষণ, সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে এমএলএ চুক্তি এবং পাচারের তথ্য চেয়ে পাঠানো চিঠির জবাব পেতে সমন্বয় কার্যক্রম গ্রহণ। এছাড়া রয়েছে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার মধ্যে সমন্বয় বাড়ানো, অর্থ পাচারসংক্রান্ত পুরোনো মামলার তদন্ত এবং পাচার প্রতিরোধে সংশ্লিষ্ট সংস্থার কার্যক্রমে সমন্বিত উদ্যোগ। সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

অর্থ পাচার নিয়ে অতীতে অনেক আলোচনা হলেও বাস্তবে পাচার রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। শুধু তাই নয়, রক্ষক হয়ে ভক্ষকের ভূমিকা পালনের খবরও বেরিয়েছে। এমন অভিযোগও রয়েছে যে, বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) অর্থ পাচার ঠেকানোর দায়িত্বে থাকলেও উলটো সংস্থাটিরই ঊর্ধ্বতন কতিপয় সদস্য পাচারকারীদের সহায়তা করেছে। আশার কথা, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর পাচারকৃত অর্থ দেশে ফেরত আনতে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ শুরু করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় দেশের ভেতরে বিভিন্ন উদ্যোগের পাশাপাশি ওয়াশিংটনে চলমান বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের বৈঠকেও উঠে এসেছে বাংলাদেশের টাকা পাচারের বিষয়টি। পাচারের অর্থ ফিরিয়ে নিতে বিভিন্ন দেশে বেসরকারি খাতের আন্তর্জাতিক মানের এজেন্সি নিয়োগ দেওয়ার পথেও হাঁটতে চলেছে সরকার।

আমরা মনে করি, এর পাশাপাশি অর্থ পাচারকারীদের যারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করেছে, তাদেরও দ্রুত আইনের আওতায় আনা দরকার। যেসব প্রক্রিয়ায় অর্থ পাচার হয়ে থাকে, সেগুলো চিহ্নিত করে তার ফাঁকফোকর বন্ধ করাও প্রয়োজন। সব ধরনের আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রেও শতভাগ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞদের মতে, অর্থ পাচার রোধে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া এ বিষয়ে কাঙ্ক্ষিত সুফল মিলবে না। যেহেতু অর্থ পাচারের সঙ্গে হুন্ডির বিষয়টি সরাসরি জড়িত, সেহেতু হুন্ডি বন্ধেও নিতে হবে পদক্ষেপ। নানা উদ্যোগ নেওয়া সত্ত্বেও প্রবাসীরা কেন বৈধ চ্যানেলে অর্থ প্রেরণে উৎসাহী হন না, তা-ও খুঁজে বের করতে হবে। অর্থ পাচারকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা না হলে এ খাতে কাঙ্ক্ষিত সুফল মিলবে কিনা, এ বিষয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনতে অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগ সফল হবে, এটাই প্রত্যাশা।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম