রাজধানীর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা
সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার ত্রুটি নিয়ে বহু আলোচনা হয়েছে, সমস্যাগুলো সমাধানে নানা উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত সুফল পাওয়া যায়নি। রাজধানীর সড়কের প্রধান সমস্যা অসহনীয় যানজট। সড়কগুলোয় চরম বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি লেগেই থাকে। অচলাবস্থা শুধু প্রধান সড়কগুলোয় নয়, তা বিস্তৃত হয়েছে অলিগলি পর্যন্ত। সড়কে অবৈধ যানবাহনের দাপট বেড়েই চলেছে। যানজটের কারণে রাজধানীবাসীকে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এ দুর্ভোগে প্রতিদিন মানুষের প্রায় ৮২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। রাজধানীতে স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার জন্য অতীতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ওইসব উদ্যোগ বাস্তবায়নে ব্যয় হয়েছে বিপুল অঙ্কের অর্থ। দুঃখজনক হলো, এতে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। পুলিশের হাতের ইশারায়ই নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে যানবাহন।
বস্তুত রাজধানীর সড়কের প্রধান সমস্যা অতিরিক্ত যানবাহন। যুগ যুগ গণপরিবহণ খাতের উন্নয়নের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা হয়েছে, নানা উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। তারপরও সমস্যা দিনদিন প্রকট আকার ধারণ করছে। রাজধানীর গণপরিবহণ খাতের সেবা প্রায় শূন্যের কাছাকাছি পৌঁছেছে। ঢাকার গণপরিবহণ খাতে উন্নত সেবা নিশ্চিত করা গেলে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা দ্রুত কমবে। গত দুদশকে ঢাকা শহরে ব্যক্তিগত গড়ির সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। গণপরিবহণ খাত বিকশিত না হলে যানজট সমস্যার সমাধানে যত পদক্ষেপই নেওয়া হোক না কেন, কাঙ্ক্ষিত সুফল মিলবে কি না সন্দেহ।
রাজধানীতে সড়কের পরিমাণ প্রয়োজনের তুলনায় কম। কম সড়কে বেশি যান চলাচলের কারণে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। সড়কে বিশৃঙ্খলা এড়াতে কর্তৃপক্ষ কোনো রকম শৈথিল্য প্রদর্শন করলে পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে। বিশৃঙ্খলাজনিত কারণে অনেকে দুর্ঘটনারও শিকার হচ্ছেন। এ নগরীতে বেশির ভাগ যানবাহনই নিয়ম মেনে চলাচল করে না। গণপরিবহণের চালকরা যেখানে-সেখানে যানবাহন থামিয়ে যাত্রী তোলে ও নামায়। আবার কোথাও বা নিজেদের ইচ্ছামতো আড়াআড়িভাবে গাড়ি থামিয়ে যাত্রী তোলা হয়। চালকদের আইন না মানার কারণেও রাজধানীর যানজট ভয়াবহ আকার ধারণ করছে।
যানজটের কারণে মানুষ যখন দিশেহারা, তখন লক্ষ করা যায় সড়কের একটি বড় অংশজুড়ে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালামাল লোড-আনলোড করা হচ্ছে; সড়কের ওপর গাড়ি পার্ক করে রাখা হয়েছে; আবার অনেকে সড়কের ওপরই পসরা সাজিয়ে বসেছে। দীর্ঘসময় যানজটে আটকে থাকায় চালক-যাত্রীদের ওপর মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়। যানজটের কারণে রাজধানীবাসীর আর্থিক ক্ষতি নিরূপণ করা সম্ভব হলেও মানুষের স্বাস্থ্যগত ক্ষতি নিরূপণ করা সম্ভব নয়। দিনদিন যানজট পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় কর্তৃপক্ষ জরুরি ভিত্তিতে এদিকে দৃষ্টি না দিলে ভবিষ্যতে এসব ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে। রাজধানীর সড়কে নতুন সমস্যা হিসাবে যুক্ত হয়েছে ব্যাটারিচালিত রিকশা। এ অবৈধ যানবাহনের কারণে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েই চলেছে। নানা উদ্যোগ নেওয়া সত্ত্বেও নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না এসব যানবাহন। রাজধানীর সড়কে যাতে অবৈধ যান চলাচল করতে না পারে, এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে কঠোর হতে হবে।
ঢাকা মহানগর এলাকায় ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আনতে পুলিশের সঙ্গে কাজ করতে ৩০০ শিক্ষার্থীকে আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্ত করা হয়েছে। পরে এ কাজে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা আরও বাড়ানোর কথা রয়েছে। বস্তুত সমন্বিত পদক্ষেপেই রাজধানীর সড়ক পরিস্থিতির উন্নয়ন সম্ভব।