অহেতুক বিদেশ সফরের প্রস্তাব
অপচয় রোধ করা জরুরি
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ছবি: সংগৃহীত
অর্থনৈতিক সংকট এবং সরকারি নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও প্রশিক্ষণের নামে বিদেশ সফরের প্রস্তাব করা হয়েছিল। জানা যায়, ‘সিলেট বিভাগে ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবস্থাপনা ও ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি’ শীর্ষক কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় পানি সেচ দেখতে কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর বাবদ ২ কোটি ৫৬ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছিল। ৮ জুলাই প্রকল্পটি নিয়ে প্রথম পিইসি সভা হয়। সেখানে বৈদেশিক প্রশিক্ষণ ও স্টাডি ট্যুরের নামে বরাদ্দ ধরা ছিল। তবে পরিকল্পনা কমিশনের আপত্তির মুখে শেষ পর্যন্ত বিদেশ ভ্রমণের প্রস্তাবটি বাদ দেওয়া হচ্ছে। আমরা জানি, ইতঃপূর্বে প্রকল্পের অজুহাতে সরকারি কর্মকর্তাদের অহেতুক বিদেশ সফরের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল। তারপরও ঠেকানো যায়নি অহেতুক বিদেশ সফরের প্রস্তাব।
বিগত সরকারের আমলে অভিজ্ঞতা অর্জনের নামে অথবা অন্যান্য অজুহাতে উন্নয়ন প্রকল্পের কর্মকর্তারা প্রায়ই বিদেশ সফর করতেন। প্রশ্ন হলো, কর্মকর্তাদের এ ধরনের বিদেশ সফরের কতটা সুফল পায় সংশ্লিষ্ট প্রকল্প? ইতঃপূর্বে আমরা এমন সব বিষয়ে প্রশিক্ষণের নামে বিদেশ সফরের প্রস্তাবের কথা জেনেছি, যেগুলো জনমনে হাস্যরসের সৃষ্টি করেছে। উদাহরণস্বরূপ, পুকুর ও খাল উন্নয়ন, ঘি-মাখন তৈরি, ঘাস চাষ, সাঁতার শেখা, মাশরুম চাষ শেখা ইত্যাদি খাতে কোটি কোটি টাকা খরচ করে সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর বা সফরের প্রস্তাব সংক্রান্ত খবর গণমাধ্যমে এসেছে। এমনকি মাছ চাষ শিখতে বিদেশ ভ্রমণের প্রস্তাবও পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানোর খবর রয়েছে। বস্তুত প্রায় ক্ষেত্রেই কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর হয়ে থাকে অপ্রয়োজনে অথবা অযৌক্তিক কারণে। অবশ্য এর মানে এ নয় যে, প্রকল্পের কর্মকর্তারা বিদেশ সফরে যাবেন না।
অত্যাবশ্যকীয় কাজে, জরুরি প্রশিক্ষণের জন্য, বিশেষ কোনো বিষয়ে কারিগরি বা ব্যবস্থাপনার জ্ঞান আহরণে অথবা কোনো কিছু ক্রয়ের উদ্দেশ্যে তাদের বিদেশ সফর করার বিষয়টি যৌক্তিক। তবে বর্তমান সংকটময় মুহূর্তে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করে কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর যত কম রাখা যায় ততই মঙ্গল। এ ব্যাপারে প্রকল্প প্রস্তাব যারা প্রণয়ন করেন, তাদেরও দায়িত্ব রয়েছে। কারণ, উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে নানা ধরনের অনিয়মের সুযোগ থাকে। যেমন, বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়িয়ে ধরা হয়। অনাবশ্যক অনেক ব্যয় যুক্ত করা হয়। এ প্রবণতা বন্ধ হওয়া জরুরি। আমরা আশা করব, যে কোনো প্রকল্পের অর্থের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে কর্মকর্তাদের অহেতুক বিদেশ ভ্রমণ নিয়ন্ত্রণসহ সব ধরনের বাহুল্য ব্যয় বন্ধের উদ্যোগ নেওয়া হবে।