খাদ্য বিভাগের দুর্নীতি: এ আমলে যেন পুনরাবৃত্তি না হয়
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২২ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
গত সরকারের আমলে দুর্নীতির যে মহোৎসব হয়েছিল, সেসব ঘটনার চিত্র ধারাবাহিকভাবে পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছে। পাঠকরা জানতে পারছেন কী ভয়াবহ দুর্নীতির আসর জমেছিল গত শাসনামলে! ৫ আগস্টের পটপরিবর্তন না হলে হয়তো দুর্নীতির এসব খবর জানাই যেত না। গতকালের যুগান্তরে প্রকাশিত হয়েছে খাদ্য বিভাগের দুর্নীতির কিছু চিত্র। এ বিভাগের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জড়িয়ে পড়েছিলেন নানা অনিয়ম-দুর্নীতিতে। তাদের কেউ সরকারি গুদামের চাল ও গম বিক্রি করে পালিয়েছেন, কেউ বা পরিচিতজনকে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। অনেকেই কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করেছেন সরকারি গাড়ি।
গত সরকারের আমলে এসব অপরাধের নামকাওয়াস্তে তদন্ত হয়েছে বটে; তবে আইন অনুসারে তাদের শাস্তি হয়নি। কারও কারও বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা হলেও তাদের গ্রেফতার পর্যন্ত করা হয়নি। অবাক কাণ্ডই বটে, সরকারি গাড়ি কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করে যে হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছিল, সেটাকে নিছক দুর্ঘটনা বলে চালানো হয়েছিল। ওদিকে সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের ব্যক্তিগত কর্মকর্তার এক আত্মীয়াকে তার সুপারিশেই সুবিধাজনক পোস্টিং দেওয়া হয়েছিল এবং তিনি সাড়ে ৪ কোটি টাকার খাদ্যশস্য বিক্রি করে ৫ আগস্টের পর পালিয়েছেন।
আমরা মনে করি, গত শাসনামলে খাদ্য বিভাগে যেসব দুর্নীতি সংঘটিত হয়েছিল, সেগুলোর প্রতিটিরই তদন্ত অথবা পুনঃতদন্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। দ্বিতীয় কথা, দেশে যেসব সেক্টরে বেশি দুর্নীতি হয়, খাদ্য বিভাগ সেগুলোর অন্যতম। খাদ্য গুদামের দায়িত্বে থাকেন যারা, তাদের বিরুদ্ধে খাদ্য চুরির এন্তার অভিযোগ উঠে থাকে। খাদ্য বিভাগের প্রতি তাই সতর্ক দৃষ্টি থাকা উচিত। দুর্নীতিটা হয় মূলত মাঠপর্যায়ে। সুতরাং মাঠপর্যায়ে উচ্চ কর্তৃপক্ষের নিয়মিত তদারকি খুবই জরুরি।
এ বিভাগের নিয়োগের ক্ষেত্রেও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। তাই এখানকার নিয়োগ প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ করতে হবে। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এ বিষয়ে গুরুত্বারোপ করবে বলে আমাদের বিশ্বাস। মনে রাখা দরকার, গত সরকারের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে, সেগুলোর অন্যতম প্রধান হলো দুর্নীতি। দুর্নীতি রোধ করতে না পারলে সরকারের জনপ্রিয়তা ধরে রাখা সম্ভব হবে না। জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানের যে অন্যতম উদ্দেশ্য, তা-ও পূরণ হবে না।