মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার
সিন্ডিকেটের অপতৎপরতা বন্ধ করতে হবে
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বৈদেশিক কর্মসংস্থানে মালয়েশিয়া দেশের অন্যতম শ্রমবাজার। কিন্তু সেখানে ফের বিতর্কিত সিন্ডিকেটের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে। শুক্রবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ, বিগত সরকারের আমলে যে সিন্ডিকেটের তাণ্ডবে এ বাজার বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, সেই চক্রের সদস্যরা ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে। চলছে বাজার দখলের মহড়া। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার পুনরায় চালুর সম্ভাবনা তৈরি হওয়ায় তৎপর হয়ে উঠেছে অসাধু চক্রটি।
জানা গেছে, ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনে এ চক্রের মূল গডফাদারসহ অনেকেই দেশ ছেড়ে পালিয়ে মালয়েশিয়ায় অবস্থান নিয়েছে। সম্প্রতি এরকম দুই ব্যবসায়ীর নেতৃত্বে সেই পুরোনো সিন্ডিকেট মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখাও করেছে। তাদের সঙ্গে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) বেশ কজন প্রভাবশালী নেতা ও একাধিক ব্যবসায়ীও ছিলেন। উল্লেখ্য, মালয়েশিয়ায় ২০১৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত যাওয়া ৭ লাখ ৪৩ হাজার কর্মীকে পাঠাতে সিন্ডিকেটকে জনপ্রতি ১ লাখ ৭ হাজার টাকা করে চাঁদা দিতে হয়েছে। সে হিসাবে ৭ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা গেছে সিন্ডিকেটের পকেটে। এ টাকার বেশিরভাগ বিদেশে পাচার করা হয়েছে। বাকি অংশ গেছে সাবেক মন্ত্রী, সংসদ-সদস্যসহ প্রভাবশালীদের পকেটে। দ্বিতীয়বার শ্রমবাজার খোলার পর এই সিন্ডিকেটের অপতৎপরতার কারণেই বৈধভাবে সবকিছু সম্পন্নের পরও অর্ধলক্ষাধিক শ্রমিককে মালয়েশিয়া সরকার ঢোকার অনুমতি দেয়নি, এমন অভিযোগও রয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের চেষ্টায় মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার আবার খুলে যাওয়ার পথ তৈরি হলেও অসাধু চক্রটির পুনরায় তৎপর হয়ে ওঠার বিষয়টি উদ্বেগজনক। সম্প্রতি সংক্ষিপ্ত সফরে ঢাকায় এসেছিলেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম। এ সময় তিনি যা বলে গেছেন, তা ভালোভাবে বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়, প্রথম ধাপে এদেশের যে ১৮ হাজার শ্রমিককে কুয়ালালামপুর নিতে আগ্রহী, সেখানে কিছু শর্তপূরণের ব্যাপার রয়েছে। শর্তগুলো জানা না থাকলেও সততা ও স্বচ্ছতার বিষয়গুলো যে অগ্রাধিকার পাবে, তা বলাই বাহুল্য। বিগত সরকারের আমলে মালয়েশিয়ায় যেতে একজন কর্মীর সর্বাধিক ৭৯ হাজার টাকা খরচ নির্ধারণ করে দেওয়া সত্ত্বেও সিন্ডিকেটভুক্ত এজেন্সিগুলো এর বিপরীতে ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা আদায় করেছে, যা এককথায় ডাকাতির শামিল। ভুলে গেলে চলবে না, শ্রমিক হিসাবে যারা ভাগ্যান্বেষণে প্রবাসে পাড়ি জমান, তাদের অধিকাংশই দেশের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর অংশ। এই পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীই হাড়ভাঙা পরিশ্রমের মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশকে এগিয়ে দিচ্ছে। কাজেই সরকারের অবিলম্বে এদিকে নজর দেওয়া দরকার বলে মনে করি আমরা। একইসঙ্গে মালয়েশিয়া গমনেচ্ছু শ্রমিকরা যেন কোনোভাবেই প্রতারণার শিকার না হন, তা-ও নিশ্চিত করা জরুরি। সরকার এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেবে, এটাই প্রত্যাশা।