ভর্তি নিয়ে উৎকণ্ঠা
মানসম্মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ফাইল ছবি
উচ্চমাধ্যমিকের ফল হাতে পাওয়ার পর প্রতিবছরের মতো এবারও দুশ্চিন্তায় পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। কারণ পরীক্ষায় কাঙ্ক্ষিত ফল অর্জন করা সত্ত্বেও পছন্দের প্রতিষ্ঠানে ভর্তি নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন অনেকে। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের নামিদামি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সব মিলে আসন সংখ্যা রয়েছে ৭০ হাজারের মতো। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১ লাখ ৪৫ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী। এছাড়া জিপিএ-৫-এর কাছাকাছি ফল অর্জন করেছেন আরও বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী। পছন্দের আসনের জন্য মূলত লড়াই হবে এসব শিক্ষার্থীর মধ্যেই। দেশে উচ্চশিক্ষার জন্য সরকারি-বেসরকারি মিলে ১৩ লাখের মতো আসন থাকলেও বর্তমানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের পছন্দের শীর্ষে। দেশে উচ্চশিক্ষা স্তরে পর্যাপ্ত আসন থাকলেও প্রতিবছর শিক্ষার্থীরা পছন্দের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটতে থাকেন। অনেকে উচ্চশিক্ষার জন্য পাড়ি জমান বিদেশে। পছন্দের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে না পেরে অনেকে লেখাপড়া ছেড়ে কর্মজীবনে প্রবেশ করেন। এ অবস্থায় দেশে উচ্চশিক্ষার প্রসারের পাশাপাশি মানসম্মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের মনোযোগ দেওয়া দরকার।
দেশের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে উচ্চশিক্ষার সুযোগ অবাধ ও সহজ করা দরকার। এক্ষেত্রে ভর্তি নিয়ে ভোগান্তি ও ব্যয় কমানোর বিষয়টি অগ্রাধিকার পাওয়ার দাবি রাখে। সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষ সদিচ্ছা নিয়ে এগিয়ে এলে দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে গুচ্ছ পদ্ধতির অন্তর্ভুক্ত করা কঠিন কিছু নয়। গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষাকে ত্রুটিমুক্ত করার জন্যও নিতে হবে পদক্ষেপ। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষাব্যয় অত্যন্ত বেশি। এ কারণে যারা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পান না, সেসব শিক্ষার্থীর পরবর্তী পছন্দ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কোনো কলেজ। লক্ষ করা যাচ্ছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলো মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছে না। কাজেই এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মান বাড়ানোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
বর্তমান বাস্তবতায় উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ শিক্ষার সব স্তরে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে এবং অর্থের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। কোনো কোনো দেশে কিছু বেসরকারি উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার মান এতটাই বেড়েছে যে, সেসব প্রতিষ্ঠানের সুনাম সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। জানা যায়, বিদেশি ওইসব উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাবেক শিক্ষার্থীরা আর্থিক অনুদান সংগ্রহে জোরালো ভূমিকা রেখে চলেছেন। আমাদেরও উচিত সেই দৃষ্টান্ত অনুসরণ করা। কারণ শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্ট সবাই যতই আন্তরিক হোন না কেন, পর্যাপ্ত বরাদ্দ না থাকলে উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পই মাঝপথে থেমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। লক্ষ করা যাচ্ছে, দেশের উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে পিছিয়ে আছে। দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো যদি আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে পিছিয়ে থাকে, তাহলে এসব প্রতিষ্ঠান থেকে যে মানের জনশক্তি তৈরি হবে, তা দিয়ে আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা কঠিন হবে। তাই যেভাবেই হোক, সার্বিক শিক্ষার মান বাড়াতে হবে। দেশের উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো যাতে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে পিছিয়ে না থাকে, তা নিশ্চিত করতে হবে।