বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এ মুহূর্তে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তাসহ চারটি প্রধান চ্যালেঞ্জ আছে বলে মনে করছে বিশ্ববাংক। এর মধ্যে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, আন্তর্জাতিক চাপ এবং আর্থিক খাতের দুর্বলতা অন্যতম। এসব কারণে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে না। চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) কমে দাঁড়াতে পারে ৪ শতাংশে। তবে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সেটি বেড়ে দাঁড়াতে পারে ৫ দশমিক ৫ শতাংশে। আর্থিক খাতে অনিশ্চয়তা, বিনিয়োগ ও শিল্পে দুর্বল প্রবৃদ্ধি এবং সাম্প্রতিক বন্যার ফলে কৃষিতে মাঝারি মানের প্রবৃদ্ধি হবে।
এসবের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে জিডিপি প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে। মঙ্গলবার রাজধানীতে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশিত বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। সংবাদ সম্মেলনে অনলাইনে ওয়াশিংটন থেকে বক্তব্য রাখেন বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদৌলায়ে সেক। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে খুব বেশি ভূমিকা রাখতে পারেনি। অথচ প্রতিবছর উল্লেখযোগ্যসংখ্যক তরুণ কর্মবাজারে প্রবেশ করছেন। তিনি আরও বলেছেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতিও বাংলাদেশের জন্য চ্যালেঞ্জ। নানা উদ্যোগ নিয়েও এটি কমানো যাচ্ছে না।
সংস্থাটি বলেছে, বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টির চ্যালেঞ্জ রয়েছে। দেশে এখনো ৮৪ দশমিক ৯ শতাংশ কর্মসংস্থান হচ্ছে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে। এদিকে সুদের হার বেড়ে যাওয়ায় বেসরকারি খাতে প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান কমেছে। দেশের মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে হলে অর্থনীতিকে গতিশীল করে এখন বিনিয়োগ বাড়ানোর সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে এবং কর্মসংস্থান বাড়ানোর পদক্ষেপও নিতে হবে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। এ অবস্থায় বেসরকারি খাতের প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। গত কয়েক বছর ধরেই দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি নানা সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বস্তুত দেশের অর্থনীতিকে বহুদিন ধরে মূল্যস্ফীতি, ডলার সংকট, বিনিয়োগ ও রাজস্ব আয়-এসব সংকট মোকাবিলা করে সামনে এগোতে হচ্ছে।
দেশের ব্যাংক খাতে নানা ধরনের সংকট রয়েছে। আর্থিক খাতের অন্যতম দুষ্ট ক্ষত খেলাপি ঋণ। এ সমস্যা দেশের অর্থনীতিতে ভয়াবহ সংকট সৃষ্টি করেছে। নানা উদ্যোগ গ্রহণের পরও এক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত সুফল মেলেনি। এমনকি নানা ধরনের ছাড় দেওয়ার পরও খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমাতে পারেনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক; বরং দিন দিন তা বেড়েছে। খেলাপি ঋণ আদায়ে কঠোর হতে হবে। দেশে ব্যাংক খাতের বড় এক সমস্যা দুর্নীতি। কাজেই এ খাতে স্বচ্ছতা ও সুশাসন নিশ্চিত করতে যা যা করা দরকার, সবই করতে হবে। ডলার সংকট নিরসনে রপ্তানি বাড়াতে হবে।
রপ্তানি বহুমুখীকরণের পদক্ষেপ নিতে হবে। রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি এবং তা ধরে রাখার পদক্ষেপ নিতে হবে। অর্থ পাচার রোধ এবং হুন্ডির প্রভাব কমানোও বড় চ্যালেঞ্জ হিসাবে রয়েছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। অতীতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হলেও কেন কাঙ্ক্ষিত সুফল পাওয়া যায়নি, তা-ও খতিয়ে দেখতে হবে। বস্তুত দেশে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় কর্মসংস্থান না হলে বহু লক্ষ্য পূরণ করাই অসম্ভব হয়ে পড়বে। কাজেই বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে বেসরকারি খাতকে চাঙা করার পদক্ষেপ নিতে হবে। দেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি না হলে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও শিল্পের বিকাশে অনিশ্চয়তা তৈরি হবে।