বাজার তদারকিতে টাস্কফোর্স
সব ধরনের কারসাজি বন্ধ করতে হবে
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
নিত্যপণ্যের দাম কমাতে সরকার নানা পদক্ষেপ নিলেও বাজারের অস্থিরতা কমছে না। কেন লাগামহীনভাবে বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম, তা খতিয়ে দেখা দরকার। মূল্যস্ফীতির কারণে স্বল্প আয়ের মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে; মধ্যবিত্তরাও সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে। বহুদিন ধরেই খাদ্য মূল্যস্ফীতি সাধারণ মানুষের সহ্যসীমার বাইরে রয়েছে।
নিত্যপণ্যের বাজার পরিস্থিতি এবং সরবরাহ তদারকি ও পর্যালোচনার জন্য এবার জেলা পর্যায়ে ‘বিশেষ টাস্কফোর্স’ গঠন করেছে সরকার। এটি আশাব্যঞ্জক। জানা যায়, জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে আহ্বায়ক করে ১০ সদস্যের এ টাস্কফোর্সে দুজন শিক্ষার্থী প্রতিনিধি থাকবেন। সঙ্গে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক থাকবেন সদস্যসচিব।
এ টাস্কফোর্সের নিয়মিত বিভিন্ন বাজার, আড়ত, গোডাউন, কোল্ডস্টোরেজ ও সাপ্লাই চেইনের অন্যান্য স্থান সরেজমিন পরিদর্শন করার কথা রয়েছে। পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য যৌক্তিক পর্যায়ে রাখার বিষয়টি তদারক করবে এ টাস্কফোর্স। সেই সঙ্গে পণ্য উৎপাদন, পাইকারি ও ভোক্তা পর্যায়ের মধ্যে যেন দামের পার্থক্য ন্যূনতম থাকে, তাও নিশ্চিত করবে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনের সঙ্গে টাস্কফোর্সের মতবিনিময়ের কথাও রয়েছে।
বহুদিন ধরে নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা চলছে। সপ্তাহের ব্যবধানে ডজনপ্রতি ডিমের দাম বেড়েছে ১০ টাকা। গত সপ্তাহে যেখানে এক ডজন ডিম বিক্রি হয়েছিল ১৬০ টাকা, সেখানে এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায়। তিন সপ্তাহের ব্যবধানে ডজনপ্রতি দাম বেড়েছে ২০ থেকে ২৫ টাকা। সরকার পরিবর্তনের পর পণ্য পরিবহণ ও কাঁচাবাজারগুলোয় চাঁদাবাজি কমে যাওয়ায় বাজারে এর প্রভাব পড়েছিল। তবে মাস যেতে না যেতেই আবার আগের মতোই বিভিন্ন খাতে চাঁদাবাজি বেড়েছে। বাজারে এর প্রভাব পড়েছে। সম্প্রতি সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণে ডিম ও মুরগির দাম বেঁধে দিলেও ব্যবসায়ীদের কারসাজির কারণে ভোক্তারা এর সুফল পাচ্ছে না।
উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে বহুদিন ধরেই অস্বস্তিতে রয়েছে সাধারণ মানুষ। বস্তুত নিত্যপণ্যের বাজারের অস্থিরতার মূল কারণগুলো চিহ্নিত; সমস্যার সমাধানে কী করণীয় তাও বহুল আলোচিত। আলোচিত সমস্যার সমাধানে জোরালো বাজার তদারকি অব্যাহত রাখা দরকার। টাস্কফোর্সের উদ্যোগে প্রতিদিন বাজার মনিটরিংসহ আরও বেশকিছু কার্যক্রম চলমান রাখার কথা রয়েছে। আশা করা যায়, এতে নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা কমবে।
লক্ষ করা যাচ্ছে, ভরা মৌসুমেও চালের বাজার অস্থির। এটা অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজির ফল। বস্তুত অসাধু ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে সব ধরনের নিত্যপণ্যের বাজারই অস্থির করে তোলে। কাজেই তাদের কারসাজি বন্ধ করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। বাজার পর্যবেক্ষণে জড়িত অসাধু কর্মকর্তাদের সঙ্গে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের যোগসাজশের বিষয়টি বহুল আলোচিত। সিন্ডিকেটের সদস্যরা যাতে পার পেতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে অসহায় ক্রেতারা অনেক জরুরি পণ্য না কিনেই বাড়ি ফিরতে বাধ্য হচ্ছেন। কাজেই উল্লিখিত সমস্যাগুলোর স্থায়ী সমাধানের পদক্ষেপ নিতে হবে। উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় নিত্যপণ্যের আমদানিনির্ভরতা কাটাতেও নিতে হবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ।