শাহজালাল ফার্টিলাইজারে অনিয়ম
দুর্নীতির শিকড় উৎপাটনের বিকল্প নেই
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
কতিপয় কর্মকর্তার অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে জর্জরিত সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জের শাহজালাল ফার্টিলাইজার। মঙ্গলবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ-জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) এ সার কারখানা থেকে অর্থ হাতিয়ে নিয়ে অঢেল সম্পদ গড়েছেন হিসাব বিভাগের প্রধানের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা। বর্তমানে সেসব সম্পদের মধ্যে ২৯৯ শতাংশ জমি এবং চারটি ফ্ল্যাট জব্দ করেছে আদালত। জানা গেছে, ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে ৩৮ কোটির বেশি টাকা আত্মসাতের অভিযোগও তদন্ত করছে অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সিআইডির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন এলাকায় থাকা তার জমি ও ফ্ল্যাট জব্দ করে আদালত। এছাড়া এ জালিয়াতির ঘটনায় পৃথকভাবে ২৬টি মামলার তদন্তও করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
অনিয়ম কী পরিমাণ হলে একজন ব্যক্তি এত বিপুল সম্পদের মালিক হতে পারেন, উপরিউক্ত তথ্য থেকে সহজেই তা অনুমেয়। এ বিষয়ে সিআইডির এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, শাহজালাল ফার্টিলাইজারের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে গত বছরের এপ্রিলে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে অর্থ পাচার আইনে মামলা করে সিআইডির ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট। এতে তাকে ও তার স্ত্রীকে অভিযুক্ত করা হয়। তদন্তে আত্মসাতের অর্থে কেনা বিভিন্ন এলাকায় জমি ও ফ্ল্যাট থাকার প্রমাণও মেলে।
এমন উদ্বেগজনক অনিয়মের পেছনে যে বিগত সরকারের অপশাসন সহায়ক হিসাবে কাজ করেছে, তা বলাই বাহুল্য। তদন্তে এ ধরনের আরও অনিয়মের চিত্র বেরিয়ে আসতে পারে, স্বরূপ প্রকাশ পেতে পারে ওই ব্যক্তির মতো আরও অনেকের। তবে যে প্রশ্নটি সর্বাগ্রে ওঠে তা হলো, অর্থ ছাড়ের বিষয়টি তো একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার পরই ঘটেছে। সেক্ষেত্রে ভুয়া বিল ও রসিদ দেখে যারা কোটি কোটি টাকা উত্তোলনে সহায়তা করেছেন, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে তাদেরও শনাক্ত করা উচিত। শুধু একজন ব্যক্তিকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে অনিয়মের পুরো সিস্টেমকে আড়ালে রাখা হলে এমন দুষ্কর্ম ভবিষ্যতেও ঘটবে।
রাষ্ট্র সংস্কারের যে প্রত্যয় নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করেছে, এর মধ্যে অন্যতম অগ্রাধিকার হলো দুর্নীতিমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা। সেই অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করতে হলে সম্পূর্ণ প্রভাবমুক্ত হয়ে দুর্নীতির শিকড় সমূলে বিনাশ করতে হবে। ভবিষ্যতের স্বার্থেই এ কাজে দলমতনির্বিশেষে সবাইকে মোহমুক্ত হয়ে সরকারকে সহযোগিতা করা দরকার। অন্যথায় এমন দৃশ্যের অবতারণা বারবারই ঘটবে।