ভোটার তথ্যভান্ডার: জননিরাপত্তার স্বার্থে দ্রুত ইসির নিয়ন্ত্রণে আনা হোক
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বাংলাদেশের নাগরিকদের ছবিসহ ভোটার তালিকা তৈরির কাজ ২০০৭ সালে শুরু করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বর্তমানে ভোটার তালিকায় নাম আছে সোয়া ১২ কোটি নাগরিকের। ভোটারদের ৪৬ ধরনের ব্যক্তিগত তথ্য নিয়ে এই তথ্যভান্ডার বা ডেটা সেন্টার গড়ে তুলেছে ইসি। পরিতাপের বিষয়, সেই ডেটা সেন্টারের সার্ভারের প্রযুক্তিগত নিয়ন্ত্রণ নেই ইসির হাতে।
সোমবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ-বেসরকারি একটি ঠিকাদারি আইটি প্রতিষ্ঠানের হাতে মূলত এর নিয়ন্ত্রণ। ডেটা সেন্টারের ক্রেডেনসিয়াল, সোর্স কোড, নেটওয়ার্ক ডায়াগ্রাম, সিস্টেম আর্কিটেকচারসহ সবকিছুই ওই প্রতিষ্ঠান ও এর সহযোগী আরেকটি সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানের কাছে। ফলে নিয়ন্ত্রণ না পাওয়া পর্যন্ত ডেটাবেজের নিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়ে চিন্তায় আছে সরকার ও নির্বাচন কমিশন। নিয়ন্ত্রণ নিতে চাইলেও কিছু কিছু সফটওয়্যারের সোর্স কোড ‘নিজস্ব বুদ্ধিভিত্তিক উদ্ভাবিত সম্পদ’ (ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি) উল্লেখ করে প্রতিষ্ঠান দুটি তা ইসিকে হস্তান্তরে আপত্তি জানিয়েছে। এ অবস্থায় ডেটা সেন্টারের নিয়ন্ত্রণ পাওয়ার জন্য কপিরাইট আইনের ১৫ নম্বর ধারা অনুসরণ করতে প্রতিষ্ঠান দুটিকে বলা হয়েছে। ওই ধারা অনুযায়ী, এসব সফটওয়্যার বা সিস্টেমের প্রথম স্বত্বাধিকারী হিসাবে মালিকানা নির্বাচন কমিশনের।
জানা যায়, ২০০৭ সালে সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় ‘অপারেশন নবযাত্রা’ নামে ওই কার্যক্রম শুরু করে তৎকালীন নির্বাচন কমিশন। তখন ডেটা এন্ট্রিসংক্রান্ত সফটওয়্যার সরবরাহ করে উল্লেখিত ঠিকাদারি আইটি প্রতিষ্ঠানটি। এখন পর্যন্ত সবকটি প্রকল্পে ডেটা সেন্টারে কাজের সঙ্গে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানটি যুক্ত রয়েছে। ছবিসহ ভোটার তালিকা তৈরির শুরুর দিকে উন্মুক্ত টেন্ডারে প্রতিযোগিতা করে প্রতিষ্ঠানটি কাজ পেলেও একপর্যায়ে সরাসরি ক্রয় প্রক্রিয়ায় (ডিপিএম) কাজ দেওয়া হয়েছে। এমনকি চুক্তির আগেই আগাম কাজ দেওয়ার নজিরও রয়েছে।
সন্দেহ নেই, বিষয়টি উদ্বেগজনক। বলা হয়, সোর্স কোড ডেটা সেন্টারের চাবির মতো। সিস্টেমের সোর্স কোড যার কাছে থাকে, ডেটা সেন্টারের মূল নিয়ন্ত্রণও থাকে তার হাতেই। স্বাভাবিকভাবেই ঘরের চাবি অন্যের কাছে থাকা ঝুঁকিপূর্ণ। ডেটা সোর্স কোড না পাওয়া পর্যন্ত ইসি জানতেও পারবে না তথ্যভান্ডার সিস্টেমে সাইবার হামলা বা হ্যাকিং রোধে নিরাপত্তা ত্রুটি রয়েছে কিনা। এমনিতেই বেশ কয়েকবার হ্যাক হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। কাজেই বিষয়টিকে হালকাভাবে নেওয়ার উপায় নেই। আমরা আশা করব, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে যত দ্রুত সম্ভব তথ্যভান্ডারের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ বুঝে পেতে তৎপর হবে নির্বাচন কমিশন। একইসঙ্গে তা রক্ষণাবেক্ষণে দক্ষ জনবল গড়ে তুলতে বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করতে হবে।
বলা বাহুল্য, বিগত সরকারের আমলে দেওয়া আইটি সেবা ক্রয়ের অনেক কার্যাদেশে নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেছে। সুতরাং এসব চুক্তি পর্যালোচনারও প্রয়োজন রয়েছে। এ মুহূর্তে ডেটাবেজ নিরাপদ রাখতে ইসির নিয়ন্ত্রণে আনার কাজটা চ্যালেঞ্জ হলেও জননিরাপত্তার স্বার্থেই তা দ্রুত করা উচিত, প্রয়োজনে ঢেলে সাজিয়ে হলেও। ভুলে গেলে চলবে না, নাগরিকদের নিরাপত্তার স্বার্থেই শুধু নয়, সার্বভৌমত্বের প্রশ্নও এখানে নিহিত রয়েছে। তাছাড়া আগামী নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করতে হলেও ক্রটিহীন ভোটার তালিকা এর অন্যতম শর্ত হিসাবে গণ্য হবে। অন্তর্বর্তী সরকার বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নেবে, এটাই প্রত্যাশা।