মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সফর, শ্রমবাজারের পথ উন্মুক্ত হোক
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আমন্ত্রণে সংক্ষিপ্ত সফরে শুক্রবার ঢাকা ঘুরে গেলেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর এটিই কোনো বিদেশি সরকারপ্রধানের প্রথম সফর। বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষে আনোয়ার ইব্রাহিম রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে অর্থনৈতিক সহযোগিতা, রাজনৈতিক সম্পর্ক, বাণিজ্য, শ্রম অভিবাসন, শিক্ষা, প্রযুক্তি, অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং প্রতিরক্ষা সহযোগিতা ছাড়াও বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়। বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে আনোয়ার ইব্রাহিম বিমানের টিকিট স্বল্পতাসহ সংকটময় পরিস্থিতির কারণে নির্ধারিত সময়ে মালয়েশিয়ায় ঢুকতে না পারা শ্রমিকদের যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়ার ঘোষণা দেন। এ সময় তিনি জানান, ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর তার পূর্ণ আস্থা আছে। তারা বাংলাদেশে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। এছাড়া সংবাদ সম্মেলনে উভয় নেতা ব্যবসা-বাণিজ্য-বিনিয়োগ বাড়িয়ে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক শক্তিশালী করতে একমত পোষণ করেন।
যৌথ সংবাদ সম্মেলনের পর বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন আনোয়ার ইব্রাহিম। এ সময় রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় যাতে আরও জনশক্তি যেতে পারে, সে ব্যাপারে মালয়েশিয়া সরকারের সহযোগিতা চান। এটা ঠিক, দেশের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক কর্মী মালয়েশিয়ায় কাজ করে থাকেন। তবে দেশটিতে বিদেশি কর্মী নিয়োগ বন্ধ থাকা ছাড়াও নানা কঠোরতার কারণে প্রবাসী এসব শ্রমিক ভোগান্তিতেও পড়েন। আশার কথা, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, তার সরকার সব শর্ত পূরণ সাপেক্ষে প্রথম ধাপে ১৮ হাজার বাংলাদেশি শ্রমিকের মালয়েশিয়ায় প্রবেশের বিষয়ে অবিলম্বে মনোযোগ দেবে।
বলার অপেক্ষা রাখে না, বিদেশি শ্রমবাজার আমাদের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে ডলার সংকটের সময় এর গুরুত্ব আরও বেড়েছে। তাই মালয়েশিয়ায় শ্রমবাজার সম্প্রসারণে ড. ইউনূস যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন, তা অবশ্যই সাধুবাদযোগ্য। আমরাও দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছি, বিশ্বের শ্রমবাজারে স্থান করে নিতে দেশের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক জনগোষ্ঠীকে দক্ষ করে গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দেওয়া উচিত। এতে এ জনগোষ্ঠী সত্যিকার অর্থেই পরিণত হবে জনসম্পদে। অতীতে নানা অনিয়ম ও সিন্ডিকেটজনিত জটিলতার কারণে মালয়েশিয়ার জনশক্তির বাজার হারিয়েছিলাম আমরা। এ বাজার যাতে কোনোভাবে আর ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেদিকে বিশেষভাবে নজর রাখা দরকার। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নতুন শ্রমবাজার খোঁজার পাশাপাশি চলমান শ্রমবাজারগুলোয় নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করতে হবে।
বিগত সরকারের সময় নানা অনিয়মের কারণে বৈধভাবে বিদেশ যাওয়ার পথ অনেক ক্ষেত্রে রুদ্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেকেই নানা মাধ্যমে অবৈধ উপায়ে বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করেছে। এতে মানুষ নানাভাবে প্রতারণা ও হয়রানির শিকার হয়েছে। মনে রাখতে হবে, প্রতারকদের কবলে পড়ে বিদেশ গমনেচ্ছুরা কেবল সর্বস্বান্তই হচ্ছে না, এর ফলে দেশও অপরিমেয় ক্ষতির মুখে পড়ছে। এ বাস্তবতা সামনে রেখে অন্তর্বর্তী সরকার দক্ষ জনবল গড়ে তোলার পাশাপাশি সব ধরনের প্রটোকল বজায় রেখে জনশক্তি রপ্তানি নিশ্চিতে গুরুত্ব দেবে, এটাই প্রত্যাশা।