Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন

খেলাপি ঋণের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন

খেলাপি ঋণের ঊর্ধ্বগতি দেশের ব্যাংক খাতের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ খাতে ছয় মাস ধরে খেলাপি ঋণের হার যেভাবে বেড়েছে, তাতে এটি এখন এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।

এ সমস্যা ব্যাংক খাতের আর্থিক ভিত্তিকে দুর্বল করে তুলেছে। তারল্য সংকট বাড়িয়েছে। বিদ্যমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ঘটিয়ে শক্তিশালী ও সুনিয়ন্ত্রিত একটি ব্যাংক খাত গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে এ খাতে গ্রাহকদের আস্থা পুনরুদ্ধারে বহুমুখী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

একইসঙ্গে সুশাসন প্রতিষ্ঠায়ও নেওয়া হয়েছে বেশকিছু পদক্ষেপ। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বুধবার প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ ব্যাংক ত্রৈমাসিক’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। এতে দেশের সার্বিক অর্থনীতি, আর্থিক খাত, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন বিষয়ে হালনাগাদ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনটি প্রতি তিন মাস পর প্রকাশিত হওয়ার কথা থাকলেও বিদায়ি গভর্নরের সময়ে বিভিন্ন খাতের নেতিবাচক চিত্র আড়াল করতে অনেক দেরিতে প্রকাশ করা হতো।

নতুন গভর্নর দায়িত্ব নিয়ে অর্থনীতি ও ব্যাংক খাতসহ সব খাতের প্রকৃত চিত্র প্রকাশ করার নির্দেশ দিয়েছেন। ফলে এখন অর্থনীতির অনেক নেতিবাচক চিত্র বেরিয়ে আসছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের কারণে এবং আগস্ট-সেপ্টেম্বরে দেশের কিছু অংশে বন্যার কারণে আগামী ত্রৈমাসিকে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কিছুটা মন্থর হতে পারে।

এ ক্ষতি মোকাবিলা করে সামষ্টিক অর্থনৈতিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য অর্থনৈতিক সংস্কারসহ একটি ব্যাপক সংস্কার পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে, এ পদক্ষেপ আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা ও সুশাসন নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে।

জানা যায়, গত ডিসেম্বরে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের হার ছিল ৯ শতাংশ। গত মার্চে তা ১১ দশমিক ১১ শতাংশে উন্নীত হয়। জুনে তা আরও বেড়ে ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশে উন্নীত হয়েছে, এক দশকের মধ্যে যা সর্বোচ্চ। খেলাপি ঋণের এমন ক্রমাগত ঊর্ধ্বগতির বিষয়টি উদ্বেগজনক।

গত ১৫ বছরে ব্যাংক খাতে অনুসৃত অধিকাংশ আইন এমনভাবে পরিবর্তন করা হয়েছে, যা মূলত ঋণখেলাপিদের স্বার্থ রক্ষা করেছে এবং খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়িয়ে তুলেছে। বিগত সরকারের সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণখেলাপিদের স্বার্থে যত সার্কুলার জারি করেছিল, তা-ও বাতিল করা দরকার। বস্তুত ঋণ প্রস্তাব অনুমোদনকালে যদি সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা যায়, তাহলে সে ঋণ হিসাব পরবর্তীকালে খেলাপি হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে।

ব্যাংক কর্মকর্তারা যাতে অযোগ্য ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ঋণদান থেকে বিরত থাকতে পারেন, তেমন পরিবেশ তৈরি করতে হবে। ঋণ প্রদানে কোনো ব্যাংক কর্মকর্তা দুর্নীতির আশ্রয় নেন কিনা, সেদিকেও কর্তৃপক্ষের জোরালো নজরদারি থাকতে হবে।

সার্বিক সুশাসনের অভাবে ব্যাংক খাতের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যাচ্ছে না। অতীতে বড় ঋণখেলাপিরা নানাভাবে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এ সমস্যা বাড়িয়ে তুলেছেন। কোনো প্রভাব খাটিয়ে যাতে ঋণখেলাপিরা পার পেতে না পারেন, সেজন্য যা যা করণীয় সবই করতে হবে। খেলাপি ঋণ আদায়ে যত পদক্ষেপই নেওয়া হোক না কেন, ব্যাংক খাতের সুশাসন নিশ্চিত করা না হলে কাঙ্ক্ষিত সুফল মিলবে কিনা, সন্দেহ থেকেই যায়।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম