তুলা খাতে দৈন্যদশা, উৎপাদন বাড়াতে সরকারি সহযোগিতা কাম্য
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ফাইল ছবি
দেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক হলেও চাহিদার তুলনায় তুলা উৎপাদনে অনেক পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। সুতা তৈরি হয় তুলা থেকে। কাজেই তুলার আমদানিনির্ভরতা যতটা সম্ভব কমানোর পদক্ষেপ নিতে হবে। তুলা আমদানিতে ব্যাপক ভোগান্তি ও আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে দেশীয় তুলা আমদানির সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে। জানা যায়, চাহিদা অনুযায়ী অর্থ নিয়েও অনেক দেশ প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তুলা সরবরাহ করে না। ফলে অনেক স্পিনিং মিলের মালিককে হয়রানির শিকার এবং আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে ৫২ বছরেও ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি দেশের তুলা শিল্প। কাজেই এমন অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে সরকারকে যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে। বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক যুগান্তরকে বলেছেন, সঠিক উদ্যোগ ও পরিচর্যার অভাবে দেশে তুলা উৎপদন কম। ফলে বিভিন্ন দেশ থেকে এ পণ্যটি আমদানি করতে হচ্ছে। এতে নানা ধরনের ভোগান্তি ও আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে অনেক প্রতিষ্ঠানকে। তিনি মনে করেন, দেশে তুলা শিল্পের দৈন্যদশার জন্য দায়ী তুলা উন্নয়ন বোর্ড। তিনি বলেছেন, মাঠ পর্যায়ের কাজ না করে বোর্ড কর্মকর্তারা বেতন-ভাতা নিচ্ছেন। এদিকে তুলা উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালকের দাবি, সরকারের সহযোগিতায় তুলা উৎপাদন দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। মাঠ পর্যায়ে চাষিদের আগ্রহও বাড়ছে। তার মতে, সরকারের সহযোগিতা অব্যাহত থাকলে দেশীয় তুলাশিল্প আরও এগিয়ে যাবে।
দেশে প্রতিবছর প্রায় ৮০ লাখ বেল তুলার প্রয়োজন হয়, যার ৮৯ শতাংশই বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হয়। এতে প্রতিবছর বিপুল অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা বিদেশে চলে যাচ্ছে। সুতা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবি, দেশের তৈরি পোশাক খাতে যে পরিমাণ তুলা প্রয়োজন, তার অর্ধেক দেশে উৎপাদন সম্ভব। কিন্তু সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা ও সঠিক উদ্যোগের অভাবে তা সম্ভব হচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে আমদানি করতে হচ্ছে। বিশ্বের যেসব দেশ তুলা উৎপাদনে সাফল্য পেয়েছে, সেসব দেশের কৃষকদের সরকারিভাবে পর্যাপ্ত সহযোগিতা দেওয়া হয়েছে এবং তা অব্যাহত রয়েছে। আমাদের দেশের কৃষকদের সরকারিভাবে পর্যাপ্ত সহযোগিতা দেওয়া হলে তারা তুলার উৎপাদন বাড়াতে সক্ষম হবেন। দেশের কৃষকদের তুলা চাষ ও তুলা সম্পর্কে পুরোপুরি ধারণা নেই। কাজেই এ বিষয়ে তাদের যথাযথ সহযোগিতা প্রদান করতে হবে। অতীতে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত অতি চমৎকার তুলা থেকেই ঢাকাই মসলিন উৎপাদিত হতো। গবেষণার ধারাবাহিকতা না থাকায় এখন ভালো মানের তুলার জন্য আমাদের আমদানির ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। যথাযথ উদ্যোগ নিলে তুলা উৎপাদনে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন করা সম্ভব হবে।