পোশাক খাতে অব্যাহত অস্থিরতা
সংশ্লিষ্ট সবাইকে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০২ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
পোশাক খাত
তৈরি পোশাক খাতে যে অস্থিরতা বিরাজ করছে, অবিলম্বে এর অবসান হওয়া উচিত। এমনিতেই সামগ্রিকভাবে অর্থনীতির অবস্থা ভালো নয়, তার ওপর সম্প্রতি দেশে একটি রাজনৈতিক পরিবর্তন হয়েছে। এ সময় পোশাকশিল্পে অস্থিরতা বিদেশি ক্রেতাদের নেতিবাচক বার্তা দেবে। ভুলে গেলে চলবে না, এ শিল্প দেশের প্রধান রপ্তানি খাত এবং আমাদের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি। এ খাতকে তাই কোনোভাবেই অস্থিতিশীল হতে দেওয়া উচিত নয়। অথচ বেশ কিছুদিন ধরে এ শিল্প ঘিরে অসন্তোষ চলছে, নানা ধরনের দাবিদাওয়া জানাচ্ছে শ্রমিকরা। সবশেষ গত সোমবার আশুলিয়ায় বকেয়া বেতন এবং পোশাক কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে শ্রমিকদের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে এক শ্রমিক নিহত হলে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে। এ ঘটনায় শিল্প পুলিশের এক কর্মকর্তাসহ যৌথ বাহিনীর কয়েকজন সদস্য আহত হয়েছেন।
ইতঃপূর্বে শ্রমিক অসন্তোষের কারণে গাজীপুর, আশুলিয়া ও সাভার এলাকায় শিল্পকারখানা বন্ধ ছিল বেশ কয়েকদিন। কয়েকটি কারখানায় ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে তখন। ধারণা করা হচ্ছে, এসবের পেছনে বহিরাগতদের ইন্ধন ছিল। এর আগে কোটা সংস্কার এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় দেশে ব্যাপক নাশকতা হয়েছে। সেসময়ও পোশাকশিল্প খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তখন পোশাক কারখানাগুলো বন্ধ থাকার কারণে প্রতিদিনই বিপুল অঙ্কের অর্থের ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া আন্দোলন চলাকালে ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় কারণেও এ খাতে প্রতিদিন বিপুল অঙ্কের অর্থের ক্ষতি হয়েছে। ওইসব ক্ষতি কাটিয়ে উঠে পোশাকশিল্প যখন ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছিল, তখনই আবার এ শিল্পে অসন্তোষ শুরু হয়। নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করার পর খুলে দেওয়া হয় পোশাক কারখানাসহ সব শিল্পপ্রতিষ্ঠান। শিল্পাঞ্চলে ফিরে আসে কর্মচাঞ্চল্য। কিন্তু কদিন না যেতেই কোনো কোনো এলাকায় আবারও শ্রমিক অসন্তোষ শুরু হওয়ায় এর পেছনে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ ওঠে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশের পোশাক খাত নিয়ে দেশি-বিদেশি গভীর ষড়যন্ত্র সক্রিয় রয়েছে। কোনো কোনো শিল্পোদ্যোক্তা মনে করেন, একটি গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে পোশাকশিল্পকে ধ্বংস করতে চক্রান্ত শুরু করেছে। বিদেশি ক্রেতাদের বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক বার্তা দিতে শ্রমিক অসন্তোষের নামে ষড়যন্ত্র চলছে। এ সংকট দ্রুত সমাধান করা সম্ভব না হলে দেশের পুরো পোশাকশিল্পে বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।
এদিকে পোশাকশিল্পে অস্থিরতার কারণে কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সময়মতো পণ্য জাহাজীকরণে অনিশ্চয়তা বাড়ছে। তাছাড়া অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারেন বিদেশি ক্রেতারা, নতুন অর্ডার দেওয়া থেকে বিরত থাকতে পারেন তারা। সামগ্রিকভাবে পোশাকশিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। রপ্তানিমুখী এ শিল্পকে বাঁচাতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক নেতা, শ্রমিক নেতা, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদেরও এগিয়ে আসতে হবে। তা না হলে এ শিল্পে অস্থিরতার অবসান হবে না। এর প্রভাব পড়বে দেশের অর্থনীতিতে।