Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

বিদ্যুৎ খাতে বিপুল গচ্চা

দায়ীদের আইনের আওতায় আনতে হবে

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বিদ্যুৎ খাতে বিপুল গচ্চা

বিদ্যুৎ খাতে বিগত সরকারের ভুল নীতি এখনো ভোগাচ্ছে জনগণকে। একদিকে ভুল নীতি ও অনিয়মের কারণে গচ্চা গেছে সরকারের হাজার হাজার কোটি টাকা, অন্যদিকে এ খাত থেকে বিপুল অঙ্কের অর্থ লুটপাট করা হয়েছে, যা ক্রমেই প্রকাশ পাচ্ছে।

সবশেষ গতকাল যুগান্তরে প্রকাশিত শীর্ষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্যাসের জোগান নিশ্চিত না করেই খুলনায় তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করে ৮ হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ গচ্চা দিয়েছে বিগত সরকার। এসব কেন্দ্র থেকে কবে নাগাদ বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হবে, সংশ্লিষ্ট কেউই তা বলতে পারছে না।

বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, কেন্দ্রগুলো চালানোর জন্য যে জ্বালানি (গ্যাস) প্রয়োজন, তা এখনো নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। তবে অভিযোগ উঠেছে, তালিকায় নাম না থাকার পরও প্রভাবশালী চার বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিককে গ্যাস দিতে গিয়ে সরকারি তিন বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস দেওয়া সম্ভব হয়নি।

ক্ষমতা ত্যাগের কিছুদিন আগে সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের মালিকানাধীন ওই চার বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়। এর ফলে অনিশ্চিত হয়ে পড়ে রূপসাসহ নির্মাণাধীন তিন কেন্দ্রে গ্যাসের সরবরাহ। এ অভিযোগের তদন্ত হওয়া এবং দায়ীদের আইনের আওতায় আনা জরুরি বলে মনে করি আমরা।

দেশে বর্তমানে ছোট-বড় মিলে বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা দেড় শতাধিক হলেও বিগত সরকারের ভুল নীতি ও অনিয়মের কারণে বিদ্যুৎ সংকট অব্যাহত রয়েছে। এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রায় ৩৬ শতাংশ বিদ্যুৎকেন্দ্রই এখন জ্বালানি সংকটে ভুগছে। বিদ্যুৎ সংকটের কারণে দেশের আবাসিক খাতের গ্রাহকদের যেমন ভোগান্তি বেড়েছে, তেমনি উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে শিল্প খাতে।

জ্বালানি খাতে বকেয়াও পড়েছে বড় অঙ্কের অর্থ। বস্তুত দেশে অপরিকল্পিতভাবে বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কুফল ভোগ করতে হচ্ছে গ্রাহকদের। রেন্টাল বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ নানা উপায়ে বিগত সরকারের অনেক উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তি যেমন সীমাহীন দুর্নীতি করেছেন, তেমনি করেছেন রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয়। চুক্তি মোতাবেক এক ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন না করেও ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ হাজার হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রমালিকদের।

বর্তমানে দেশে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ খাতে নেওয়া আগের ভুল নীতিগুলো সংশোধনের যথাসম্ভব চেষ্টা চালানো উচিত। জ্বালানির অভাবে যেসব কেন্দ্র বিদ্যুৎ উৎপাদনে যেতে পারছে না, সেসব কেন্দ্রে কীভাবে এ সংকট দূর করা যায় সেদিকে গুরুত্ব দিতে হবে। উল্লেখ্য, বিদ্যুৎ উৎপাদনে আমরা তিন ধরনের জ্বালানি বেশি ব্যবহার করি, সেগুলো হলো-গ্যাস, কয়লা ও জ্বালানি তেল। এগুলোর বেশিরভাগই আমদানি করতে হয়। সেক্ষেত্রে অর্থের সংস্থানে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছে সহায়তা চাওয়া যেতে পারে।

বিদ্যুতের যে উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে, তা দিয়ে দেশের চাহিদা মেটানো সম্ভব হলে অযাচিতভাবে যেসব কোম্পানির কাছ থেকে বিদ্যুৎ ক্রয়ে চুক্তি হয়েছিল, সেসব বাতিল করা উচিত। সংস্কারের অংশ হিসাবে পরিবর্তন আনা দরকার এ খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বেও। দুর্নীতিতে যারাই জড়িত ছিল, তাদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনা হলে অনিয়মের পুরো চিত্রটি প্রকাশ পাবে নিশ্চয়ই। অন্তর্বর্তী সরকার দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সংস্কারে উদ্যোগী হবে, এটাই কাম্য।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম