জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট মামলার নিষ্পত্তি
উচ্চ আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করুন
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট মামলাগুলোয় উচ্চ আদালত যুগান্তকারী নির্দেশনা বা রায় দিলেও তা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন না হওয়ার বিষয়টি দুঃখজনক। রাজধানী ঢাকার বায়ুদূষণ রোধে ৯ দফা নির্দেশনা দিয়ে ২০২০ সালে রায় দিয়েছিলেন উচ্চ আদালত। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য নির্দেশনা ছিল-ঢাকার সড়কগুলোতে পানি ছিটানো, যেসব গাড়ি কালো ধোঁয়া ছাড়ে সেগুলো জব্দ করা, যেসব ইটভাটা লাইসেন্সবিহীনভাবে চলছে, সেগুলো বন্ধ করা। মঙ্গলবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ-সেই নির্দেশনার বাস্তবায়ন এখনো পুরোপুরি হয়নি। এর ফলে দেশ ও সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। নির্দেশনার বাস্তবায়ন না হওয়ার পেছনে রাজনৈতিক মদদপুষ্ট প্রভাবশালীরা যেমন আছে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা, নিষ্ক্রিয়তা ও অবহেলার অভিযোগও রয়েছে। এ অবস্থায় দেশের আইন বিশেষজ্ঞরা মনিটরিং সেল গঠনের মাধ্যমে রায় বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়ার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তাদের মতে, যত প্রভাবশালীই হোক, আদালতের নির্দেশনা অমান্যকারীদের আইনের আওতায় আনা জরুরি।
বেসরকারি পর্যায়ে কর্মরত মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন ছাড়াও বিক্ষিপ্তভাবে কিছু সংগঠন জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে মামলা করে থাকে। এছাড়া সুপ্রিমকোর্টের বেশ কয়েকজন আইনজীবী ব্যক্তিগতভাবেও এ ধরনের মামলা করে থাকেন। সংবিধানে স্পষ্টভাবে বলা আছে-প্রশাসন ও জনগণ সবাই উচ্চ আদালতের নির্দেশনা মানতে বাধ্য। রায় বাস্তবায়ন না হলে সংবিধানের ১০৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা যায়। এক্ষেত্রে যে কেউ আদালত অবমাননার অভিযোগে মামলা করতে পারেন; কারণ, সুপ্রিমকোর্ট কোনো রায় দিলে সেটা ‘পাবলিক ডকুমেন্ট’ হয়ে যায়। এ ধরনের মামলার রায় যাতে পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়, সেদিকে কঠোর নজরদারি প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন।
বস্তুত জনস্বার্থে করা মামলার নির্দেশনা কঠোরভাবে পালনের ক্ষেত্রে প্রশাসনকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে সর্বাগ্রে। এ বিষয়ে তাদের সঠিকভাবে উদ্বুদ্ধ করা না গেলে কোনো চেষ্টাই সফলতার মুখ দেখবে না। বলার অপেক্ষা রাখে না, জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট মামলাগুলোর যেসব রায় ও নির্দেশনা ইতঃপূর্বে এসেছে এবং এর মধ্যে যেগুলোর বাস্তবায়ন হয়েছে, সেগুলো সমাজে অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছে। এ ধারা অব্যাহত রাখতে সবারই উচিত উচ্চ আদালতের রায় মানা, যা সবার জন্য বাধ্যতামূলকও বটে। আইন মেনে না চললে দেশে আইনের শাসন প্রশ্নবিদ্ধ হবে, যা মোটেই কাম্য নয়। দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট মামলাগুলোর ব্যাপারে উচ্চ আদালত প্রদত্ত নির্দেশনা বা রায় যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা হবে, এটাই প্রত্যাশা।