সরকারি চাকুরেদের সম্পদের হিসাব
শুধু নিয়মের মধ্যেই যেন সীমাবদ্ধ না থাকে
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরিতে প্রবেশের পর থেকে নিয়মিত সম্পদ-বিবরণী প্রদানের বাধ্যবাধকতা থাকলেও বিগত সরকারের সময়ে এর ব্যত্যয় দেখা গেছে। এর পেছনে কতিপয় কর্মকর্তার অনীহাই ছিল প্রধান কারণ। অবশ্য প্রায় ১৬ বছর পর ১৫ লাখ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর সম্পদের হিসাব নিচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। সোমবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ-চলতি বছর থেকেই প্রত্যেককে সম্পদ-বিবরণী দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রোববার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদ-বিবরণী দাখিল সংক্রান্ত বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এবার ৩০ নভেম্বরের মধ্যে ক্যাডারভুক্ত কর্মচারীরা প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে ও নন-ক্যাডার কর্মচারীরা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের কাছে সম্পদ-বিবরণী জমা দেবেন। আগামী বছর থেকে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পদ-বিবরণী দাখিল করতে হবে।
জানা গেছে, সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা ১৯৭৯-এর বিধান বলে প্রতি পাঁচ বছর অন্তর সম্পদ-বিবরণী দাখিলের বিধান থাকলেও নতুন করে তা প্রতিবছর জমা দেওয়ার বিধান করা হয়েছে। যেসব কর্মচারী সম্পদ-বিবরণী দাখিল করবেন না, তাদের বিরুদ্ধে প্রথমে লঘুদণ্ড ও চূড়ান্ত পর্যায়ে গুরুদণ্ড আরোপ করা হবে। এ বিধান সব কর্মচারীর জন্য সমভাবে প্রযোজ্য হবে। প্রশাসনের কাজে স্বচ্ছতা আনতে অন্তর্বর্তী সরকারের এ উদ্যোগ সাধুবাদযোগ্য, সন্দেহ নেই।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের জুলাইয়ে অর্থাৎ আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় থাকাকালেই এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে যুগান্তর। সেসময়ই জানা গিয়েছিল, কর্মকর্তাদের সম্পদের হিসাব কীভাবে গোপন রাখা যায়, তা নিশ্চিতের জন্যই ছিল এ বিলম্ব।
অনুসন্ধানে উঠে আসে, তারা চাইছিলেন না জমাকৃত সম্পদের হিসাববিবরণী জনসম্মুখে আসুক। সরকারের কাছে তারা এ সংক্রান্ত তথ্যের গোপনীয়তার নিশ্চয়তাও চাইছিলেন। শুধু তাই নয়, যুক্তি হিসাবে তারা বোঝাতে চেয়েছেন, যেহেতু তারা দেশের ও জনগণের জন্য কাজ করছেন, তাই সম্পদ গোপনের নিশ্চয়তা না দিলে যদি তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন, দুশ্চিন্তায় মানসিক চাপে থাকেন, তাহলে সুষ্ঠুভাবে দাপ্তরিক কাজ সম্পাদনে বিঘ্ন ঘটতে পারে। এছাড়া ১৪ লাখ সরকারি চাকরিজীবীর সম্পদের হিসাব নিয়ে তা ব্যবস্থাপনার মতো জনবলেরও অভাব রয়েছে বলে দাবি করেছিলেন। সম্পদের তথ্য গোপনের স্বার্থে এসব যে খোঁড়া যুক্তি, সন্দেহ নেই।
অবশ্য কর্মচারীদের সম্পদের তথ্যদানের এ পদক্ষেপ যেন শুধু নির্দেশ বা নিয়মের মধ্যেই সীমাবদ্ধ না থাকে, সেদিকেও সরকারের দৃষ্টি দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করি আমরা। কারণ, যারা অবৈধ পন্থায় এরই মধ্যে সম্পদের মালিক হয়েছেন, তারা যে তথ্য গোপনের নানা কৌশল অবলম্বন করবেন, তা বলাই বাহুল্য। যদিও তা হবে না বলেই আশ্বাস দিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব।
তিনি জানিয়েছেন, সম্পদ-বিবরণী প্রদানকারীর একজনের পেছনে একজন মোতায়েন থাকবে। কেউ তথ্য গোপন করলে তা আর গোপন থাকবে না, এমনিতেই বেরিয়ে আসবে। অবশ্য তিনি এটাও জানিয়েছেন, সম্পদ-বিবরণী অত্যন্ত গোপনীয় বিধায় তথ্য অধিকার আইনেও এ বিষয়ে কিছু চাওয়া যাবে না। তবে আদালতের আদেশ বা কর্তৃপক্ষ প্রয়োজন মনে করলে তা প্রকাশ করা যাবে। আমরা আশা করব, সম্পদ-বিবরণী প্রদানের এ উদ্যোগের মধ্য দিয়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে দুর্নীতির প্রবণতা হ্রাস পাবে।