Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

অনিয়মে জর্জরিত রেল খাত

স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে পদক্ষেপ কাম্য

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

অনিয়মে জর্জরিত রেল খাত

ফাইল ছবি

নানা অনিয়মে জর্জরিত দেশের রেলওয়ে খাতের সংস্কারের বিষয়ে ইতঃপূর্বে বহুবার আলোকপাত করা হলেও কার্যত পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়নি। বিগত সরকার পতনের পর দীর্ঘদিন ধরে চলা নানা দুর্নীতির চিত্র বর্তমানে বের হয়ে আসছে। এসবের মধ্যে দুটি অনিয়মের চিত্র রোববার যুগান্তরে প্রকাশ পেয়েছে। একটি ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে সময় সাশ্রয়ী কর্ডলাইনের মতো প্রকল্প আমলে না নেওয়া ও অপরটি ৩৩৬ কোটি টাকায় নির্মিত ঈশ্বরদী-রূপপুর রেলপথসংক্রান্ত। প্রতিবেদনে প্রকাশ, ঢাকা থেকে বৃত্তাকার রেললাইন হয়ে যাত্রীদের চট্টগ্রাম যেতে প্রায় ৬ ঘণ্টা সময় লাগছে। এ সময়সীমা কমিয়ে আনতে এ রুটে গত ১৫ বছরে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হয়। ১২০ থেকে ১৩০ কিলোমিটার গতিসম্পন্ন ট্রেনও যুক্ত করা হয় রেলবহরে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বরং গৃহীত প্রকল্প ও গতিসম্পন্ন ট্রেন ক্রয়ের নামে বেশুমার লুটপাট হয়েছে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ে লুটপাটের উদ্দেশ্যে ওই রুটেই আবার পরিকল্পনা নেওয়া হয় ৩০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন প্রকল্পের। কিন্তু রেল বিভাগ থেকে বিভিন্ন সময়ে কর্ডলাইনের প্রস্তাব দেওয়া হলেও মন্ত্রণালয় ও দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী-সচিবরা তা আমলে নেননি।

অপর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, রেলওয়ের অদূরদর্শী সিদ্ধান্তের কারণে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে ৩৩৫ কোটি ৯৭ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত ঈশ্বরদী-রূপপুর রেলপথটি এখনো অব্যবহৃত পড়ে আছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালপত্র প্রকল্পের অভ্যন্তরে পৌঁছাতে ও লোড-আনলোডের জন্য তৈরি করা হয় রূপপুর রেলস্টেশন ও ঈশ্বরদী-রূপপুর রেলপথ। অথচ উদ্বোধনের দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও কোনো পণ্য এখনো পরিবহণ হয়নি এ রেলপথে। জানা গেছে, যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে বিপুল পরিমাণ টাকায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়েছে, তাতে রূপপুর প্রকল্পের দৃশ্যমান সুফল মেলেনি। আধুনিক আঙ্গিকের এ স্টেশনটি পড়ে আছে জনশূন্য।

বস্তুত, অব্যবস্থাপনার প্রেক্ষাপটে রেলের লাভজনক হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও লোকসানের ভারে ন্যুব্জ হয়ে পড়েছে সংস্থাটি। রেলের প্রধান সমস্যাগুলো চিহ্নিত হলেও এগুলোর সমাধানে বিগত সরকারকে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। সে সময়ে রেলের অবকাঠামো উন্নয়নে দৃশ্যমান বেশকিছু পদক্ষেপ নেওয়া হলেও আসলে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এখনো চলমান রয়েছে বিপুল অঙ্কের অর্থের নানা প্রকল্প। এসব প্রকল্পের যৌক্তিকতা যাচাই করে পুনঃসিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত বলে মনে করি আমরা। শুধু তাই নয়, যেসব প্রকল্পের নামে সীমাহীন অর্থ লুটপাট হয়েছে, সমীক্ষার মাধ্যমে সেগুলোরও প্রকৃত চিত্র বের করা প্রয়োজন। যারা এসব প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত, তাদেরও আনতে হবে জবাবদিহিতার আওতায়।

উন্নত প্রযুক্তি ও অবকাঠামো, দ্রুতগতির ট্রেন, সময়মতো চলাচল নিশ্চিত করার পাশাপাশি যাত্রীসেবার মান উন্নত করে বহু দেশ তাদের রেল যোগাযোগব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনতে সক্ষম হলেও আমাদের দেশে ভিন্ন চিত্র দেখা যায়। যেহেতু দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে রেলের রুগ্ণ দশা কাটছে না, সেহেতু এ সংস্থার সর্বক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষকে গুরুত্ব বাড়াতে হবে। দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত রেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কঠোর হাতে দমনের মাধ্যমে রেলের সার্বিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটানো হবে, এটাই প্রত্যাশা।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম