ব্যাংক খাতের সংস্কার, অনিয়ম দূর করে আস্থা ফেরাতে হবে
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ব্যাংক খাত
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অনিয়ম ও দুর্নীতি দেশের বিভিন্ন খাতকে কীভাবে গ্রাস করেছিল তা বহুল আলোচিত। ওই সময় বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাত। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো ব্যবহার করে জালিয়াতির মাধ্যমে বিপুল অঙ্কের অর্থ বের করে নিয়েছিলেন হাতেগোনা কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যবসায়ী। এছাড়া আরও অনেক অনিয়ম ও সমস্যায় জর্জরিত এ খাত। এমন পরিস্থিতিতে ব্যাংক খাত সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে ব্যাংক খাতের সংস্কারের লক্ষ্যে টাস্কফোর্স গঠনের বিষয়টি প্রশংসার দাবি রাখে। জানা যায়, এ টাস্কফোর্স মূলত আর্থিক স্থিতিশীলতা রক্ষার্থে ব্যাংক খাতের বর্তমান আর্থিক পরিস্থিতি, মন্দ সম্পদসহ বিভিন্ন ঝুঁকি নিরূপণে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করবে। এছাড়া দুর্বল ব্যাংকগুলোর জন্যও নেওয়া হবে বিশেষ পদক্ষেপ। এ খাতের বড় সমস্যা সিদ্ধান্ত গ্রহণে রাজনৈতিক ও করপোরেট প্রভাব। অতীতে প্রভাবশালীরা নানা কৌশলে ব্যাংক থেকে বিপুল অঙ্কের ঋণ নিয়ে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। জানা যায়, টাস্কফোর্স ব্যাংক খাতে সুশাসন নিশ্চিত করার কৌশল বিষয়ে সুপারিশ করার পাশাপাশি ব্যাংকের সিদ্ধান্ত গ্রহণে রাজনৈতিক ও করপোরেট প্রভাব সীমিত করাসহ বিভিন্ন প্রস্তাব পেশ করবে এবং তা বাস্তবায়নের সঙ্গেও যুক্ত থাকবে। এক্ষেত্রে দুর্দশাগ্রস্ত ব্যাংকগুলোর দিকেও বিশেষ দৃষ্টি থাকবে।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার ব্যাংক খাত সংস্কারে ব্যাংক কমিশন গঠনের ঘোষণা দিয়েছিল। সরকার এখন এ বিষয়ে টাস্কফোর্স গঠন করেছে। ব্যাংক খাত সংস্কারে বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ঋণ দিচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের আধুনিকায়ন ও সক্ষমতা বাড়ানোর ক্ষেত্রেও এ ঋণ ব্যয় করার কথা রয়েছে। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন একটি প্রকল্প হাতে নিচ্ছে। এ খাতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল থেকেও সহায়তার আশ্বাস মিলেছে।
ব্যাংকের পর্ষদ পুনর্গঠনসহ ব্যাংক খাতকে ঢেলে সাজাতে ইতোমধ্যে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে অল্প সময়ের মধ্যেই ইতিবাচক ফল পাওয়া গেছে। এ খাতের দুর্দশার অবসানে প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রণয়নের পাশাপাশি কঠোর নজরদারি অব্যাহত রাখা দরকার। তা না হলে অপ্রয়োজনীয় আমদানি এবং অর্থ পাচারের মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি শুরু হতে পারে। ব্যাংক খাতে সংকটের সূত্রপাত বহু আগে থেকেই। গত কয়েক বছরে এ সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। একটি বিশেষ গোষ্ঠীর মাধ্যমে বেশকিছু ব্যাংক বিশেষভাবে নিয়ন্ত্রণের ঘটনাও ঘটেছে; ঋণের নামে ব্যাংক লুটপাট এবং বিদেশে অর্থ পাচারের ঘটনাও ঘটেছে। লাগামহীন খেলাপি ঋণ, বহু ব্যাংকে তারল্য সংকট, ডলার ও রিজার্ভ সংকট ব্যাংক খাতের ক্ষত বাড়িয়ে দিয়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসাবে অতীতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভূমিকা ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। এসব কারণে ব্যাংকের প্রতি গ্রাহকের আস্থাহীনতা বেড়েছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়তে শুরু করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, ব্যাংক খাতের প্রতি গ্রাহকের আস্থাহীনতার কারণেই আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে গিয়েছিল। বস্তুত এ খাতে দুর্নীতি ও অনিয়ম দূর হলে এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হলে গ্রাহকের আস্থা বাড়বে। ধারণা করা হচ্ছে, এ খাতে শৃঙ্খলা ফিরে এলে রেমিট্যান্সপ্রবাহ আরও বাড়বে। এ খাতে আস্থার সংকট দূর করতেও কর্তৃপক্ষকে গুরুত্ব বাড়াতে হবে। টাস্কফোর্সের সুপারিশ পরবর্তী নির্বাচিত সরকার আমলে নেবে, এটাই প্রত্যাশা।