Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

পোশাকশিল্পে অস্থিরতা

ইন্ধনদাতাদের দ্রুত খুঁজে বের করতে হবে

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

পোশাকশিল্পে অস্থিরতা

বেশ কিছুদিন ধরে দেশের পোশাকশিল্প ঘিরে যে অসন্তোষ চলছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। বিরূপ পরিস্থিতির কারণে আশুলিয়া, সাভার ও টঙ্গীতে সোমবার ১১৯টি কারখানা বন্ধ রাখা হয়। শ্রমিকদের সঙ্গে মালিকপক্ষের আলোচনায় কোনো সমাধানে পৌঁছাতে না পারায় মঙ্গলবার শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় ৪০টি কারখানা বন্ধ ছিল। এদিন গাজীপুরে কয়েকটি পোশাক কারখানায় কর্মবিরতি পালন করেছে শ্রমিকরা। কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় সময়মতো পণ্য জাহাজীকরণে অনিশ্চয়তা বাড়ছে।

এদিকে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছেন বিদেশি ক্রেতারা, দিচ্ছেন না নতুন অর্ডার। সামগ্রিকভাবে পোশাকশিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে নানা শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশের পোশাক খাত নিয়ে দেশি-বিদেশি গভীর ষড়যন্ত্র সক্রিয় রয়েছে। এ সংকট দ্রুত সমাধান করা সম্ভব না হলে দেশের পুরো পোশাকশিল্পে বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। বিকেএমইএর সভাপতি বলেছেন, তৈরি পোশাকশিল্প কঠিন সময় অতিক্রম করছে। শ্রমিক অসন্তোষের জেরে একদিকে কারখানা বন্ধ থাকায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, অন্যদিকে বিদেশি ক্রেতারা শীত ও গ্রীষ্মের অর্ডার কমিয়ে দিয়েছেন।

রপ্তানি আদেশ যাতে অন্য দেশে চলে যায়, সেজন্য পরিকল্পিতভাবে পোশাক কারখানায় হামলা-ভাঙচুর চালানো হচ্ছে। তিনি বলেছেন, সড়কের বিক্ষোভের সঙ্গে সাধারণ শ্রমিকদের দূরতম সম্পর্কও নেই। রপ্তানিমুখী এ শিল্পকে বাঁচাতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক নেতা, শ্রমিকনেতা, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদেরও এগিয়ে আসতে হবে। তা না হলে এ শিল্পে অনাকাঙ্ক্ষিত অস্থিরতা দেখা দিতে পারে। এর প্রভাব পড়বে দেশের অর্থনীতিতে। কোনো কোনো শিল্পোদ্যোক্তা মনে করেন, একটি গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে পোশাকশিল্পকে ধ্বংস করতে চক্রান্ত শুরু করেছে। বিদেশি ক্রেতাদের বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক বার্তা দিতে শ্রমিক অসন্তোষের নামে ষড়যন্ত্র চলছে।

দেশের অর্থনীতি যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ খুঁটির ওপর দাঁড়িয়ে আছে, তার অন্যতম হলো পোশাকশিল্প। কাজেই এ শিল্পে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে যা যা করণীয়, তার সবই সরকারকে করতে হবে। যেহেতু শ্রমিক অসন্তোষের নেপথ্যে বহিরাগতদের ইন্ধনের অভিযোগ উঠেছে, সেহেতু এ বিষয়ে ইন্ধনদাতাদের দ্রুত খুঁজে বের করে তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় দেশে ব্যাপক নাশকতা হয়েছে। সে সময়ও পোশাকশিল্প খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আন্দোলন চলাকালে ইন্টারনেট সংযোগ না থাকার কারণেও এ খাতে প্রতিদিন বিপুল অঙ্কের অর্থের ক্ষতি হয়েছে। সেসব ক্ষতি কাটিয়ে উঠে পোশাকশিল্প যখন ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছিল, তখনই আবার এ শিল্পে অসন্তোষ শুরু হয়।

কোনো কোনো কারখানা কর্তৃপক্ষের দাবি, পুরোনোদের হটিয়ে নতুন করে ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিতে চায় কোনো কোনো পক্ষ। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মালিকদের কাছে নিজেদের গুরুত্ব বোঝানোর চেষ্টা করছে তারা। এদিকে একেক কারখানার শ্রমিকরা একেক ধরনের দাবি জানাচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, এবার সুনির্দিষ্ট দাবির বদলে ‘অযৌক্তিক’ দাবির দিকে ঝুঁকে পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর চেষ্টা করছে কেউ কেউ। যেহেতু দেশের পোশাকশিল্পে অসন্তোষের নেপথ্যে বারবার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ ওঠে, সেহেতু দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের বিষয়েও কর্তৃপক্ষকে সতর্ক থাকতে হবে। রিজার্ভ সংকটের এ সময়ে রপ্তানিমুখী শিল্পকারখানায় স্বাভাবিক অবস্থা নিশ্চিত করতে হবে যে কোনো উপায়ে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম