দুর্নীতিতে দুদকের সংশ্লিষ্টতা, ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠায় সংস্কার কাম্য
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
দুর্নীতি দমনের দায়িত্বে থাকলেও বিগত সরকারের সময়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারী যে রক্ষকের বদলে ভক্ষকের ভূমিকায় ছিলেন, এমন অভিযোগ বারবার উঠেছে। সরকার পতনের পর দুদকের এমন নানা অনিয়মের তথ্য বের হয়ে আসছে।
সোমবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ- গ্রানাইট খনিতে পাথর উত্তোলনের নামে ৬০০ কোটি টাকা লোপাটের ঘটনা দুদক ধামাচাপা দিয়েছে। দুদক সূত্রে জানা গেছে, সংস্থাটির প্রকাশ্য অনুসন্ধানে ভয়াবহ এই দুর্নীতির তথ্য-প্রমাণ পেলেও কমিশন সেই প্রতিবেদন আমলে না নিয়ে অনুসন্ধান কর্মকর্তাকে সরিয়ে তা ধামাচাপা দেয়।
সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ-মামলার সুপারিশ করা প্রতিবেদন পালটে অভিযোগ পরিসমাপ্তির প্রতিবেদন তৈরিতে লেনদেন হয় ১০ কোটি টাকা। দুদকের ঊর্ধ্বতনদের যোগসাজশে মোটা অঙ্কের এই ঘুসের বিনিময়ে অভিযুক্তদের ছাড় দেওয়া হয়। দায় এড়াতে এ ঘটনা তদন্তে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়কে দায়িত্ব দিয়ে চিঠি পাঠায় দুদক। অভিযোগটি যে ভয়াবহ, এতে কোনো সন্দেহ নেই। কারণ এ ঘটনায় প্রতীয়মান হয়, দুদকের ভেতরে ‘শর্ষের ভূত’ ছিল বিধায় অনেক ক্ষেত্রে দুর্নীতিবাজরা নিজেদের বাঁচাতে সফল হয়েছেন। এমন ঘটনা নিশ্চয়ই আরও রয়েছে।
প্রশ্ন হচ্ছে, সংস্থাটিতে যারা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন, তারা কি এখনো বহাল তবিয়তে নিজ নিজ জায়গায় বহাল রয়েছেন। যদি বহাল থাকেন, তাহলে দুর্নীতি দমনে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাটি আদৌ নিজ দায়িত্ব পালনে সফল হবে কি? সংস্কারের মাধ্যমে এই ভূত দূর করতে না পারলে দুদকের কাজে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন সম্ভব নয়। সাধারণত দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের বিশ্বাসযোগ্য সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ থাকার পরই যাচাই-বাছাই কমিটির সুপারিশে দুদক অনুসন্ধান করে। ওই ঘটনায় যেখানে ২ বছরের অনুসন্ধানের পর অনুসন্ধান কর্মকর্তা মামলার সুপারিশ করেছেন, সেখানে আরেক কর্মকর্তার পরিসমাপ্তির জন্য প্রতিবেদন দাখিলের বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ। তাছাড়া যেখানে মন্ত্রণালয়ের অধীনে চাকরি করা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ, সেখানে এই অভিযোগের অনুসন্ধান চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানোর যৌক্তিকতা নেই। আদতে প্রভাবশালীদের ছাড় দেওয়ার জন্য এটা করা হয়েছে-এমন প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক।
বিগত সরকারের শীর্ষস্থানীয়দের আস্থাভাজন যারা দুদকে এখনো কর্মরত রয়েছেন, তারা অনিয়মের এমন নানা তথ্য যদি চাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন, তাহলে দুর্নীতির তদন্ত প্রক্রিয়া যেমন বাধাগ্রস্ত হবে, তেমনি অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা ও আত্মসাৎ করা অর্থ উদ্ধার করা কোনোভাবেই সম্ভব হবে না। এক্ষেত্রে দুদকে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিষয়ে গভীর অনুসন্ধানের প্রয়োজন রয়েছে। সপরিবারে তাদের সম্পদের হিসাবই শুধু নয়, অতীত কর্মকাণ্ড সম্পর্কেও গোপন গোয়েন্দা প্রতিবেদনের আলোকে তারা দায়িত্বে থাকার যোগ্য কিনা, সে সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি। যাদের কর্মকাণ্ড দুদকের কাজের সঙ্গে সামঞ্জস্য নয়, তাদের বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া না হলে প্রতিষ্ঠানটির ভাবমূর্তি যে চরমভাবে ক্ষুণ্ন হবে, তা বলাই বাহুল্য।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সফল হতে হলে দুদককে যথার্থই স্বাধীন ও শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান হিসাবে গড়ে তুলতে হবে। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনে দুদক আইনে আনতে হবে সংশোধনী। দুর্নীতি প্রতিরোধে সরকারকেও সত্যিকারের সদিচ্ছার প্রমাণ দিতে হবে। সেক্ষেত্রে দুদককে শক্তিশালী করার ব্যাপারে অন্তর্বর্তী সরকার এগিয়ে আসবে বলে আমাদের বিশ্বাস।