ঢামেকে অনভিপ্রেত ঘটনা, চিকিৎসকদের দাবি মেনে খাতটিকে স্বাভাবিক করুন
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে যা ঘটে গেল, তা এক কথায় অনভিপ্রেত। শনিবার দুই রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে তাদের স্বজনরা পৃথক পৃথক সময়ে কর্তব্যরত চিকিৎসকদের ওপর হামলা করে। এছাড়া শনিবার রাতে দুষ্কৃতকারীদের দুটি গ্রুপ ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ঢুকে নিজেদের মধ্যে মারামারি করে। এ সময় তারাও চিকিৎসকদের গায়ে হাত তোলে এবং জরুরি বিভাগে হামলা চালায়। এরপর রাতেই ইন্টার্নরা কর্মবিরতি শুরু করেন। রোববার সকালে তাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন অন্য চিকিৎসকরা। দুপুরে দেশব্যাপী ঘোষণা করা হয় কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি। এমন এক অচলাবস্থার মধ্যে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই সমন্বয়কের সঙ্গে আন্দোলনরত চিকিৎসকদের বৈঠকের পর ২২ ঘণ্টা বিরতি শেষে রোববার রাত ৮টা থেকে জরুরি বিভাগে চিকিৎসাসেবা দেওয়া শুরু হয়। তবে বৈঠকে চিকিৎসকরা চার দফা দাবি তুলেছেন। এসব দাবির একটি হলো, সাত দিনের মধ্যে চিকিৎসক সুরক্ষা আইন করতে হবে। আরেকটি দাবি হলো, যত চিকিৎসক তত নিরাপত্তা কর্র্মীর ব্যবস্থা করতে হবে। বলা হয়েছে, এ দাবি পূরণ না হলে রুটিন ওয়ার্কে ফিরবেন না চিকিৎসকরা।
চিকিৎসকদের ওপর হামলা এবং তাদের দাবি মানা না হলে রুটিন ওয়ার্কে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত দেশবাসীকে চিন্তিত করেছে নিঃসন্দেহে। দ্বিতীয় কথা, ঢামেক হাসপাতালে এখন শুধু জরুরি বিভাগে সেবা দেওয়া হচ্ছে, বাকি চিকিৎসাসেবা না দেওয়ার ফলে রোগীদের শারীরিক ও মানসিক অবস্থা সহজেই অনুমেয়। ছাত্র-জনতার সফল আন্দোলনের পর একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হওয়ার এক মাসেরও কম সময়ে ঢামেক হাসপাতালের ঘটনা এবং এর জেরে সারা দেশে কমপ্লিট শাটডাউনের কর্মসূচি এটাই প্রমাণ করছে যে, সরকার এখনো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি। সরকার গঠিত হওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন সংস্থা ও গ্রুপের দাবি-দাওয়াসংবলিত আন্দোলন সরকারকে বিব্রত ও দেশকে অস্থিতিশীল করার একটা চেষ্টা বলতেই হবে। সরকারকে কাজ করার সময় না দিয়ে এভাবে দাবি-দাওয়া উত্থাপন কতটা যৌক্তিক, এ প্রশ্ন থেকেই যায়। চিকিৎসকদের দাবিগুলো যৌক্তিক বটে এবং আমরা আশা করব, সরকার এ দাবিগুলো যথাসময়ে পূরণ করবে। একজন ছাত্র সমন্বয়কও বলেছেন, চিকিৎসকদের দাবি যৌক্তিক। দ্বিতীয় কথা, চিকিৎসকদের মারধর করেছে যারা, তাদেরও চিহ্নিত করতে হবে এবং যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার মুখোমুখি করতে হবে।
আমরা এর আগে দেখেছি, ভুল চিকিৎসার অভিযোগ এনে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসকদের ওপর হামলা করা হয়েছে। কথা হলো, ভুল চিকিৎসা হয়ে থাকলে আইনে এর প্রতিকার রয়েছে। শারীরিক আক্রমণ কোনো অবস্থাতেই অনুমোদনযোগ্য নয়। চিকিৎসকরা ভয়মুক্ত পরিবেশে সেবাদান করবেন, এটাই স্বাভাবিক। আমরা আশা করব, চিকিৎসকদের যৌক্তিক দাবি মেনে নিয়ে সরকার চিকিৎসা খাতে স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেবে এবং অসহায় রোগীদের নিরবচ্ছিন্ন চিকিৎসাসেবা অব্যাহত রাখা হবে।