Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

টিআইবির ৫৫ সুপারিশ

সময় লাগলেও বাস্তবায়ন জরুরি

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ৩০ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

টিআইবির ৫৫ সুপারিশ

বিগত সরকারের দীর্ঘ শাসনামলে অনিয়ম-দুর্নীতি, অর্থ পাচার, গুম-খুনসহ নানা অপকর্মের তথ্য ক্রমেই বেরিয়ে আসছে। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর এসব অপকর্মের সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে বলে আশা করা যায়।

আমাদের অভিজ্ঞতা হলো, রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতা গ্রহণের পর ক্রমেই স্বেচ্ছাচারী হয়ে ওঠে। এ প্রবণতা রোধে এখন থেকেই সঠিক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন।

বুধবার দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) নতুন বাংলাদেশ গঠনে ৫৫টি সুপারিশ উত্থাপন করেছে। এর মধ্যে অর্থ পাচার প্রতিরোধে টাস্কফোর্স গঠনসহ নানা পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এসব সুপারিশের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো, দুই মেয়াদের বেশি কাউকে প্রধানমন্ত্রী না রাখা। পাশাপাশি একই ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী, দলীয় প্রধান এবং সংসদ নেতা না থাকা, সংসদ নির্বাচনকে প্রশ্নমুক্ত রাখতে নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনেরও সুপারিশ করা হয়েছে।

এছাড়া উল্লেখযোগ্য অন্যান্য সুপারিশের মধ্যে রয়েছে-ব্যাংক খাতে ঋণ জালিয়াতি, সব ধরনের প্রতারণা ও অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি, বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংকের পরিচালক-কর্মকর্তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা; বিদ্যুৎ খাতে ক্যাপাসিটি চার্জ বাতিল করা; জাতীয় সংসদে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের সংসদীয় ব্যবস্থা প্রবর্তন করা; নির্বাচিত সংসদ-সদস্যসহ জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে গণ-অনাস্থা প্রকাশের মাধ্যমে অপসারণ এবং ওই এলাকায় নতুন নির্বাচনের ব্যবস্থা করা।

পাশাপাশি উচ্চ আদালতে বিচারপতি নিয়োগ ও অপসারণ প্রক্রিয়া, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনকে দলীয় প্রভাবমুক্ত করা, সরকারি চাকরি আইন-২০১৮ ও সরকারি কর্মচারী (আচরণবিধি) ১৯৭৯ হালনাগাদ করা, দেশে-বিদেশে সব আর্থিক লেনদেনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা, সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩-এ মানবাধিকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ধারাগুলো সংশোধন বা বাতিল করা।

টিআইবি যেসব প্রস্তাব দিয়েছে, তার অধিকাংশই গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করি আমরা। অবশ্য এসব সুপারিশকে বাস্তবায়ন করার জন্য সব রাজনৈতিক দল, স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে বসে আলোচনা করার প্রয়োজন রয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোকেও অভ্যন্তরীণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে একটি রূপরেখা প্রণয়নে উদ্যোগী হতে হবে।

লক্ষণীয়, রাষ্ট্র পরিচালনায় নির্বাহী ও বিচার বিভাগকে পৃথককরণই শুধু নয়, প্রভাবমুক্ত রাখাটাও জরুরি। সেক্ষেত্রে বিচার বিভাগে আইনের শাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বিচার বিভাগের পরিপূর্ণ ক্ষমতায়িত নিজস্ব সচিবালয় স্থাপনের যে সুপারিশ করা হয়েছে, তা বাস্তবায়ন করা হলে সুফল মিলবে নিশ্চয়ই। সুপারিশগুলোর বাস্তবায়ন সহজসাধ্য নয়, তবে সময় লাগলেও তা করতে হবে।

সেই সঙ্গে কোন কোন বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করতে হবে, তার তালিকা করাও জরুরি। সেক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন, মানবাধিকার কমিশন এবং দুর্নীতি দমন কমিশনকে অগ্রাধিকারের তালিকার শীর্ষে রাখা উচিত বলে মনে করি আমরা।

একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের পরিপূর্ণ সুফল পেতে হলে যারা দেশ পরিচালনা করবেন, তাদের শাসক নয়, সেবকের মনোভাব নিয়ে দায়িত্ব পালন করতে হবে। জনসাধারণের কল্যাণের কথা মাথায় রেখে সব ধরনের কর্মপরিকল্পনা তাদের গ্রহণ করতে হবে। ভুলে গেলে চলবে না, জনগণই সব ক্ষমতার উৎস।

পরিতাপের বিষয়, যারাই রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন-এ কথাটি স্মরণে রাখতে পারেন না। ফলে জনগণকেই তা মনে করিয়ে দিতে হয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আগামীর বাংলাদেশ একটি পূর্ণ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় পরিচালিত হবে, এটাই প্রত্যাশা।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম