প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ
প্রতিশ্রুত সংস্কার কর্মসূচিকে স্বাগত
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২৭ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ছবি সংগৃহীত
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ২৫ আগস্ট রাতে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন। ক্ষমতা গ্রহণের পর এটাই ছিল জাতির উদ্দেশে দেওয়া তার প্রথম ভাষণ। স্বাভাবিকভাবেই ভাষণটি প্রচারের আগে দেশবাসী গভীর আগ্রহের সঙ্গে অপেক্ষা করছিল তা শোনার জন্য। বলা বাহুল্য, দেশ এখন এক সন্ধিক্ষণের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। গণ-অভ্যুত্থানের ফলে দীর্ঘ ১৬ বছর স্থায়ী সরকারের পতন হওয়ার পর একটি দলনিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে।
এ সরকার রাষ্ট্রের বিভিন্ন খাতে সংস্কার করবে বলেও কথা দিয়েছে। এ সংস্কারগুলো কোথায় কীভাবে করা হবে, সরকারের মেয়াদই বা কতদিন-এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজছিলেন সাধারণ মানুষ। সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের মধ্য দিয়ে সেসব প্রশ্নের উত্তর মিলেছে।
প্রধান উপদেষ্টা তার আধঘণ্টার ভাষণে প্রস্তাবিত সংস্কারগুলো সম্পর্কে ধারণা দিয়েছেন। দেশের অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মানবাধিকার, নির্বাচনব্যবস্থা, আইনিব্যবস্থা প্রভৃতিসহ আরও অনেক ক্ষেত্রে সংস্কার করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, দীর্ঘ সময় একটি স্বৈরাচারী সরকার দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও আইনিব্যবস্থা নষ্ট করে দিয়েছে। আমরা সংস্কারের ব্যাপারে তার অঙ্গীকারকে সাধুবাদ জানাই। বস্তুত একটি নিরাপদ, মানবিক ও গণতান্ত্রিক সমাজের আকাঙ্ক্ষা রয়েছে দেশের প্রত্যেক নাগরিকের। সন্দেহ নেই, এমন একটি সমাজ গড়ে তোলার কাজটি চ্যালেঞ্জিং।
তবে প্রধান উপদেষ্টা একজন প্রতিভাবান মানুষ, তার প্রজ্ঞাও প্রশ্নাতীত। তিনি যদি তার উপদেষ্টামণ্ডলী সহযোগে আন্তরিকভাবে চেষ্টা করেন, তাহলে দেশ একটি উন্নত স্তরে পৌঁছতে সক্ষম হবে। এক্ষেত্রে দেশের সর্বসাধারণেরও উচিত সর্বতোভাবে সরকারকে সাহায্য করা। প্রধান উপদেষ্টাও দেশের মানুষ এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছ থেকে এ সহযোগিতা চেয়েছেন। আমরা আশা করতে চাই, দেশের বর্তমান হযবরল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানোর পাশাপাশি সরকার আমাদের এমন এক জায়গায় পৌঁছে দেবে, যেখান থেকে আমরা একটি নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকারের দিকে যাত্রা করতে পারি।
একটি প্রশ্নের উত্তর অবশ্য স্পষ্টভাবে পাওয়া যায়নি। আর সেটা হলো, এ সরকারের মেয়াদ কতদিন এবং নির্বাচন অনুষ্ঠান করা সম্ভব হবে কখন। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, বিষয়টি নির্ধারণ করবে জনগণ। অর্থাৎ জনগণ যতদিন চাইবে, ততদিন সরকার ক্ষমতায় থাকবে। নির্বাচন প্রশ্নে তিনি বলেছেন, এটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়। আমাদের কথা হলো, রাজনৈতিক দলগুলোকে আগামী নির্বাচনের প্রশ্নে ঐকমত্যে পৌঁছাতে হবে। এই ঐকমত্যে পৌঁছানোর বিষয়টির নিষ্পত্তি করতে হবে আলোচনার মাধ্যমে।
আন্দোলন করা গণতান্ত্রিক অধিকার বটে, তবে এমন কোনো পরিস্থিতি তৈরি করা যাবে না, যা সমাজকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে। প্রধান উপদেষ্টাও সবাইকে আহ্বান জানিয়েছেন, সরকার যেন তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে পারে, সে লক্ষ্যে ঘেরাও কর্মসূচি পালন না করে লিখিত আকারে দাবিদাওয়া উত্থাপন করা হয়। এ প্রসঙ্গে বলা যায়, প্রধান উপদেষ্টার বক্তৃতার পরপরই দেশের আনসার বাহিনী ও ছাত্রসমাজের মধ্যকার সংঘর্ষ আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে। এ ধরনের অনভিপ্রেত ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সে লক্ষ্যে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। জাতি সুশৃঙ্খলভাবে একটি নির্বাচিত সরকারের দিকে যাত্রা করুক, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।