রোহিঙ্গা সংকটের সাত বছর
আদৌ প্রত্যাবাসন হবে কি?
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২৬ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন নিয়ে সাত বছর ধরে বহু চেষ্টা হয়েছে, আলোচনাও হয়েছে প্রচুর। তবে তাতে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। মিয়ানমারে বর্তমানে অভ্যন্তরীণ সংঘাতময় পরিস্থিতির কারণে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন জটিলতা আরও বেড়েছে। দিন যত যাচ্ছে ততই কঠিন হচ্ছে রোহিঙ্গা সংকট। ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে একরকম ধামাচাপা পড়ে গেছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যু। তাই নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা। অভিযোগ রয়েছে, মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার কথা বলে কিছু কার্যক্রম দেখালেও ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের মধ্যে সন্ত্রাসী সৃষ্টি করছে। আন্তর্জাতিক মহলে রোহিঙ্গাদের সন্ত্রাসী হিসাবে প্রমাণ করে প্রত্যাবাসন ঠেকানোই তাদের মূল লক্ষ্য, এমনটি দাবি খোদ রোহিঙ্গাদের। বস্তুত কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য হয়ে উঠেছে। জানা যায়, মাদক, আধিপত্য বিস্তারসহ নানা অপরাধকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পের ভেতরে-বাইরে বহু সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ গড়ে উঠেছে। এতে ক্যাম্পের অভ্যন্তরে প্রায় প্রতিদিনই তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গোলাগুলির মতো ঘটনাও ঘটছে। এ দেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে অপরাধপ্রবণতা দিনদিন বেড়েই চলেছে। শুধু ক্যাম্পের ভেতরে নয়, কক্সবাজার ও বান্দরবানের সীমান্তবর্তী নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুমের সীমান্তের শূন্যরেখা এবং আশপাশের দ্বীপে অপরাধীদের ঘাঁটি গড়ে ওঠার তথ্যও রয়েছে।
বস্তুত দীর্ঘ সময় পরও মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তনের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়ায় বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের হতাশা ক্রমে তীব্র হচ্ছে। ফলে নানা ধরনের নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগ ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। মিয়ানমারে এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াজুড়ে অপরাধ ও মানব পাচারের ঘটনা আঞ্চলিক নিরাপত্তা হুমকি হিসাবে দেখা দিয়েছে। মিয়ানমার ও বাংলাদেশের উপকূল থেকে মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে রোহিঙ্গা এবং বাংলাদেশিদের মানব পাচার এখন এক গুরুতর সমস্যায় পরিণত হয়েছে। প্রত্যাবাসনের পাশাপাশি রোহিঙ্গা সমস্যার টেকসই সমাধানে কী করণীয়, তা বহুল আলোচিত। অতীতে নেওয়া পদক্ষেপগুলোর মাধ্যমে কেন সুফল মিলছে না, তা খতিয়ে দেখার পাশাপাশি এ সমস্যার সমাধানে সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিতে হবে। আগামী দিনে এ সংকট মোকাবিলায় ত্রাণ সহায়তা অব্যাহত রাখতে নতুন দাতাগোষ্ঠীর সন্ধান করতে হবে। এ সংকটের একমাত্র সমাধান হলো তাদের নিজ দেশে প্রত্যাবর্তন। এক্ষেত্রে যে অচলাবস্থা বিরাজ করছে, এর অবসানে জোরালো উদ্যোগ নিতে হবে। রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনে জোরালো কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রাখতে হবে।