জ্বালানি খাত সংস্কারের তাগিদ
দুর্নীতির সহযোগীরা আসুক আইনের আওতায়
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২০ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ছবি সংগৃহীত
বিগত সরকারের আমলে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে কালোটাকার পাহাড় গড়তে যে কয়টি খাত সহায়ক ভূমিকা রেখেছিল, সেগুলোর মধ্যে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত অন্যতম। এ খাত থেকে বিপুল অঙ্কের অর্থ লুটপাট করা হয়েছে, যা ক্রমেই প্রকাশ পাচ্ছে। উদ্বেগের বিষয় হলো, এসব অপকর্মকে জায়েজ করতে ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন-২০১০’ পাশ করা হয়েছিল।
বলা হয়েছিল, এ আইনের অধীনে নেওয়া কোনো সিদ্ধান্তের বিষয়ে প্রশ্ন তোলা যাবে না। তাই এটি পরিচিতি পায় দায়মুক্তি আইন হিসাবে। পরিসংখ্যান বলছে, গত ১৪ বছরে দরপত্র ছাড়া বিভিন্ন চুক্তি করা হয়েছে এ আইনে। দুর্নীতির চেয়েও বেশি ক্ষতি করেছে এসব নীতি। তাই দুর্নীতি রোধে আইনটি দ্রুত বাতিলসহ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত সংস্কারে ১৭টি দাবি জানিয়েছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। একই সঙ্গে চলমান প্রকল্প বাস্তবায়নসহ এ খাতের উন্নয়নে অন্তর্বর্তী সরকারকে ১০০ দিনের বিশেষ কর্মপরিকল্পনা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
বলার অপেক্ষা রাখে না, রেন্টাল বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ নানা উপায়ে বিগত সরকারের অনেক উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তি যেমন সীমাহীন দুর্নীতি করেছেন, তেমনই করেছেন রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয়। আবার এটিও অস্বীকার করার উপায় নেই, বেশকিছু ভালো প্রকল্পও চলমান রয়েছে, যেগুলো বাস্তবায়ন হওয়া জরুরি।
একই সঙ্গে দ্রুত বিদ্যুৎ ক্রয়ের বিশেষ আইন বাতিল করার পাশাপাশি এ খাতে জবাবদিহি বাড়াতে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে (বিইআরসি) স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দেওয়াও প্রয়োজন বলে মনে করি আমরা। বাজেটের ভর্তুকির অর্থ সংগ্রহের জন্য ঘনঘন বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রবণতারও অবসান কাম্য। আশার কথা, জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা এরই মধ্যে দাম বাড়ানো হবে না বলে জনগণকে আশ্বস্ত করেছেন।
বর্তমানে বিদ্যুতের যে উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে, তা দিয়ে দেশের চাহিদা মেটানো সম্ভব হলে অযাচিতভাবে যেসব কোম্পানির কাছ থেকে বিদ্যুৎ ক্রয়ে চুক্তি হয়েছিল, সেসব বাতিল করা উচিত। সংস্কারের অংশ হিসাবে পরিবর্তন আনা দরকার এ খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বেও। দুর্নীতিতে যারাই জড়িত ছিল, তাদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনা হলে অনিয়মের পুরো চিত্রটি প্রকাশ পাবে নিশ্চয়ই। দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সংস্কারে উদ্যোগী হবে অন্তর্বর্তী সরকার, এটাই প্রত্যাশা।