যৌথ অভিযানের উদ্যোগ
দুর্নীতিবাজরা যেন কোনোক্রমেই ছাড় না পায়
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১৯ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
গেল সরকারের আমলে রাজনীতিক, আমলা, ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে নানা শ্রেণি-পেশায় থাকা কিছু সুযোগসন্ধানী দুর্নীতিবাজ অঢেল সম্পদের মালিক বনে যান। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর সাধারণ জনতার দাবি ওঠে, অপকর্মে জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হোক। রোববার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শিগ্গিরই দুর্নীতিবাজদের গ্রেফতার ও কালোটাকা উদ্ধারে যৌথ বাহিনীর মাধ্যমে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করতে যাচ্ছে। সরকারের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, এরই মধ্যে অভিযান পরিকল্পনা চূড়ান্ত করার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। মন্ত্রণালয় ও জেলাভিত্তিক টাস্কফোর্স গঠন করে বর্তমানে দুর্নীতিবিরোধী এই অভিযানের ছক করা হচ্ছে। আরও জানা যায়, ১-১১ এর সরকারের আদলে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে যৌথ বাহিনীর একাধিক অফিস করা হবে। এ কাজে সেনাবাহিনী, প্রশাসন, দুদক, পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি সদস্যরা দায়িত্বে থাকবেন। আর এককভাবে আইনগত পদক্ষেপ নেবে দুদক। অন্যরা সব ধরনের ‘লজিস্টিক সাপোর্ট’ দেবে।
উল্লেখ্য, গত ৫ জুলাই ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে যেতে বাধ্য হন। এরপরই আত্মগোপনে চলে যান সাবেক মন্ত্রী-এমপি থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগপন্থি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। বেগতিক অবস্থা টের পেয়ে সরকার পতনের আগে ও পরে দেশ ছাড়ার সুযোগও নিয়েছেন অনেকেই। তবে বেশির ভাগ মন্ত্রী-এমপি, সুবিধাভোগী আমলা ও ব্যবসায়ী দেশ ছাড়তে পারেননি। এখন পলাতকদের ধরতে অভিযানের ছক চূড়ান্ত করা হচ্ছে।
দুর্নীতিবাজদের গ্রেফতার ও কালোটাকা উদ্ধারে যৌথ বাহিনীর এ অভিযানের উদ্যোগ সাধুবাদযোগ্য। আমরা মনে করি, এ অভিযানের মাধ্যমে দলমতনির্বিশেষে সন্ত্রাসী ও দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে সবার কাছে বার্তা পৌঁছায়, অপরাধ করলে কেউ পার পাবে না। অবশ্য যৌথ অভিযান শুরু হতে কেন দেরি হচ্ছে, কেউ কেউ এমন প্রশ্ন করছেন। মনে রাখতে হবে, যারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন, তারা সবকিছু গুছিয়ে জেলাভিত্তিক নির্দেশনাগুলো দিতে চলেছেন। ফলে এমন অভিযানে কিছুটা বিলম্ব হওয়া অস্বাভাবিক নয়। বরং দেখার বিষয়, দুর্নীতিবিরোধী এ অভিযান সফল হয় কি না। আগের অভিযানগুলোয় দুর্নীতিবাজরা যেমন ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে গেছে, এবার তারা সেই সুযোগ পাবে কি না।
গেল সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট দুর্নীতিবাজরা ক্ষমতার অপব্যবহার করে দেশে তো অগাধ সম্পদের মালিক বনেছেনই। অনেকে আবার পরিবারকে বিভিন্ন দেশে স্থায়ীও করিয়েছেন। মালয়েশিয়া, ইংল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, ইউএই ইত্যাদি দেশে কয়েক হাজার বাংলাদেশি বাড়ি-ফ্ল্যাট এবং বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্যে হাজার হাজার কোটি টাকা লগ্নি করেছেন। ইতঃপূর্বে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থার প্রকাশিত প্রতিবেদনে দুর্নীতিবাজদের এসব অপকর্মের তথ্য উঠে এসেছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়নের মধ্য দিয়ে দেশে লুটপাটের যে সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে, তা রাষ্ট্রের মূল ভিত দুর্বল করে দিয়েছে। দেশে দুর্নীতি ও অনিয়মের ব্যাপক বিস্তার এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির ঘাটতির কারণে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তা প্রতিরোধে গেল সরকারের আমলে কার্যকর ও দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ দূরে থাক, বরং সমর্থন জোগাতে দেখা গেছে। এবার অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এসব দুষ্কর্মকারীকে আইনের আওতায় এনে অবৈধ অর্থসম্পদ উদ্ধারে সফল হবে, এটাই প্রত্যাশা।