আর্থিক খাতে কেলেঙ্কারি: অপকর্মের কারিগরদের কঠোর শাস্তি কাম্য
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১৭ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
আর্থিক খাতে অনিয়ম ও দুর্নীতির চোরাবালিতে দেশের মানুষ যে ক্রমেই ডুবে যাচ্ছিল, বিগত সরকারের পতনের পর ক্রমেই তা প্রকাশ পাচ্ছে। শেয়ারবাজার কারসাজি এবং অর্থ আত্মসাতে জড়িত ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা। এছাড়া নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সদ্য পদত্যাগ করা চেয়ারম্যান, এক সাবেক কমিশনার এবং বর্তমান নির্বাহী পরিচালকসহ ক্ষমতাসীন অনেকেই আর্থিক কেলেঙ্কারিতে যুক্ত ছিলেন। জানা গেছে, এ বিষয়ে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) মে মাসে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রতিবেদন জমা দিলেও ব্যবস্থা নেওয়া দূরের কথা, অদৃশ্য শক্তির জোরে অপরাধীরাই আরও প্রভাবশালী হয়ে ওঠে। সিআইডির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিল প্রভাবশালী আরও অনেকের নাম। পরিতাপের বিষয়, তাদের কারও বিরুদ্ধেই নেওয়া হয়নি কোনো ব্যবস্থা।
ভয়াবহ ব্যাপার হচ্ছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা এবং বিএসইসির সদ্য পদত্যাগ করা চেয়ারম্যান যৌথভাবে শেয়ারবাজারে নানা কারসাজি ঘটিয়ে এ খাতকে বিপর্যয়ের মুখে ফেলে দেন। একদিকে তারা বাজার থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেন, অপরদিকে মার্কেটে তারল্য সংকট সৃষ্টি করে ধারাবাহিক পতন ঘটিয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের নিঃস্ব করে ফেলেন। এছাড়া তালিকাভুক্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নানা কৌশলে দখলদারিত্বসহ সার্ভেইল্যান্স সফটওয়্যার অপব্যবহার করে শেয়ারবাজারের অতি সংবেদনশীল গোপন তথ্য কারসাজি চক্রকে নিয়মিত সরবরাহ করেন।
বলা বাহুল্য, শেয়ারবাজারসহ আর্থিক খাতে কেলেঙ্কারির সঙ্গে যারাই জড়িত, তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনতে হবে। ভুলে গেলে চলবে না, এরা নিছক অপরাধী নয়, উচ্চপদে অধিষ্ঠিত হয়ে তারা রাষ্ট্রযন্ত্রের অপব্যবহার করেছেন। কাজেই তারা নিকট অতীতে গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন, এই দৃষ্টিকোণ থেকে না দেখে তদন্তকার্যে যারাই থাকবেন, তারা এসব অপরাধীকে দেশদ্রোহী হিসাবে বিবেচনায় নেবেন বলে মনে করি আমরা। সেক্ষেত্রে শুধু আগে প্রকাশিত গোয়েন্দা রিপোর্টের ভিত্তিতেই নয়, তদন্তের স্বার্থে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের কঠোর জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে সব সত্য আদায় করা প্রয়োজন। একইসঙ্গে তাদের পাচার করা অর্থও ফেরত আনতে হবে। অনিয়ম, দুর্নীতি ও লুটপাটের নহর বইয়ে যারা দেশের মানুষকে চরম দুর্বিপাকে ফেলেছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে সত্য উদ্ঘাটন করে তাদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করবে, এটাই প্রত্যাশা।