নতুন সরকারের কাছে প্রত্যাশা
দরকার কৌশলনির্ভর পথরেখার সফল বাস্তবায়ন
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১২ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার পতনের পর দেশের মানুষ এক উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আশায় পথ চেয়ে রয়েছে। সন্দেহ নেই, নোবেলজয়ী বিশ্ববরেণ্য অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন নবগঠিত অন্তর্বর্তী সরকারে যারাই রয়েছেন, তারা জ্ঞান ও প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়ে দেশ পরিচালনা করলে জনগণের এ প্রত্যাশা পূরণ অসম্ভব নয়। তবে সে পথ যে কণ্টকাকীর্ণ, এ কথা অনেকেই বলছেন। অর্থাৎ নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই রাষ্ট্র পরিচালনা করতে হবে অন্তর্বর্তী সরকারকে। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে যে দুর্নীতির শেকড় গেড়ে বসেছে, রাষ্ট্র সংস্কার করতে গেলে তা শক্ত হাতেই উপড়ে ফেলতে হবে। কিন্তু তা কীভাবে? প্রত্যাশার পাশাপাশি এ প্রশ্নও অনেকের মধ্যে রয়েছে। সম্প্রতি দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ জানিয়েছে, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, ন্যায়বিচার ও মানবাধিকারের নিশ্চয়তাসহ একটি সুশাসিত ‘নতুন বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে রাষ্ট্র কাঠামো সম্পূর্ণরূপে ঢেলে সাজাতে প্রয়োজন সুনির্দিষ্ট কৌশলনির্ভর পথরেখা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন। শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংস্থাটি বিগত সরকারের দুঃশাসনের অবসানে ছাত্র-জনতার অজেয় শক্তির অভূতপূর্ব এ অর্জনে সবাইকে, বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানিয়ে এক্ষেত্রে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদানের আগ্রহের কথাও জানায়।
ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দুঃশাসনের বিগত সরকারের পতনের পর জনগণের মধ্যে গগনচুম্বী যে প্রত্যাশার জন্ম নিয়েছে, তা পূরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে রাষ্ট্র কাঠামো সম্পূর্ণরূপে যে ঢেলে সাজাতে হবে, তা বলাই বাহুল্য। স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী পর নতুন করে স্বাধীনতার চেতনায় বাংলাদেশকে পুনর্গঠনের যে সুবর্ণ সুযোগ তৈরি হয়েছে, তা কাজে লাগাতে নতুন সরকারকে সর্বশক্তি নিয়োগ করতে হবে। সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে দুর্নীতিবাজদের চিহ্নিত করে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
পরিতাপের বিষয়, বিজয়ের উল্লাসের মাঝে জাতীয় আশা-আকাঙ্ক্ষা ও অনুপ্রেরণার উৎস মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত অনেক নিদর্শন ও স্থাপনায় হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। নতুন সরকারকে জনগণের মাঝে দেশাত্মবোধ সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখার পাশাপাশি সমাজে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। জরুরি বিবেচনায় দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দ্রুত উন্নয়নের পাশাপাশি একটি জনবান্ধব পুলিশ বাহিনী তৈরিতে এর ব্যবস্থাপনা ও কর্মকাঠামো পুরোপুরি ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিতে হবে। বাহিনীটির কাঙ্ক্ষিত পেশাগত উৎকর্ষ এবং প্রাতিষ্ঠানিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি-কাঠামো নিশ্চিত করতে হবে। অবশ্য এরই মধ্যে সে কাজ শুরু হয়েছে। ‘নতুন বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শতভাগ সফল হবে, এটাই প্রত্যাশা।