গুরুদায়িত্বে প্রফেসর ইউনূস: দেশবাসীর আকাঙ্ক্ষা পূরণ করা চাই

সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৮ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

প্রফেসর ইউনূস। ছবি: সংগৃহীত
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসাবে সর্বসম্মতিক্রমে মনোনীত হয়েছেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধান, কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়কদের প্রতিনিধিসহ সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। এ সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই। জানা গেছে, তরুণ প্রজন্মের ইচ্ছার প্রতি সম্মান জানিয়ে ড. ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণে সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন। বলার অপেক্ষা রাখে না, তার মতো একজন নোবেলজয়ী বিশ্ব ব্যক্তিত্বকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারপ্রধান হিসাবে পাওয়া জাতির জন্য সৌভাগ্যের ব্যাপার। তার প্রতি রইল আমাদের আন্তরিক শুভেচ্ছা। এ সম্পাদকীয় লেখা পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অন্যান্য সদস্যের নাম প্রকাশ করা হয়নি। আশা করছি, অচিরেই তা প্রকাশ করা হবে। প্রত্যাশা থাকবে, দেশের এ ক্রান্তিলগ্নে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ভেঙে পড়া অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করার পাশাপাশি সামাজিক শৃঙ্খলা ফেরাতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি চলমান রাজনৈতিক সংকটে গণমানুষের মনস্তত্ত্ব বুঝে তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতে উত্তরণের পথ প্রদর্শনে বিচক্ষণতার পরিচয় দেবে।
শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কারের দাবি থেকে পর্যায়ক্রমে সৃষ্ট গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে সোমবার হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। এ আন্দোলনে ঝরে গেছে অনেক প্রাণ। রাষ্ট্রীয় ও বেসরকারি স্থাপনার ক্ষয়ক্ষতিও কম হয়নি। তবে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, পরবর্তী সময়ে পুলিশের ওপর বিক্ষুব্ধ জনতার হামলা, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর চড়াও হওয়া, সুযোগসন্ধানী দুষ্কৃতকারীদের দেশের বিভিন্ন স্থানে লুটপাটের ঘটনা এ বিজয়ের আনন্দকে কিছুটা হলেও ম্লান করে দিয়েছে। পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, শেখ হাসিনার পদত্যাগের দুদিন কেটে গেলেও দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। যেহেতু পুলিশ জনরোষের শিকার হয়েছে, তাই কীভাবে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে, সে ব্যাপারে সেনাবাহিনী এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। তা না হলে মানুষের জানমালের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতেই থাকবে।
উপর্যুক্ত পরিস্থিতির আলোকে অন্তর্বর্তী সরকারকে যে নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে, তা বলাই বাহুল্য। বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলা করার পাশাপাশি কোটা সংস্কার আন্দোলনে যেসব হতাহতের ঘটনা ঘটেছে, দেশে এ পর্যন্ত যেসব অনিয়ম-দুর্নীতি, গুম-খুন হয়েছে-সেগুলোর নেপথ্যে যারা কুশীলব হিসাবে কাজ করেছে, তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনতে হবে। যারা প্রকৃতই অবিচারের শিকার হয়েছিলেন, সেসব আটক বন্দির মুক্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। মোটকথা, দেশে নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি না করে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হলে তাতে জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন নাও ঘটতে পারে। অর্থাৎ ক্ষত না সারিয়ে গণতন্ত্রকে চলতে দিলে তা আবারও মুখ থুবড়ে পড়ার আশঙ্কা থেকেই যাবে। স্মরণে রাখতে হবে, চলমান পরিস্থিতির দিকে যেমন দেশের মানুষ তাকিয়ে রয়েছে, তেমনি আন্তর্জাতিক মহলও বাংলাদেশের পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সব দিক বিবেচনা করে তাদের জ্ঞান ও প্রজ্ঞার প্রয়োগ ঘটিয়ে দেশের চলমান সংকট উত্তরণে কার্যকর ভূমিকা রাখবে, এটাই দেশবাসীর প্রত্যাশা।