Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

সংকটময় পরিস্থিতিতে দেশ

সব পক্ষের সহনশীল মনোভাব কাম্য

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ০৫ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সংকটময় পরিস্থিতিতে দেশ

শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কারের আন্দোলন এখন সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ নিয়েছে। অবশ্য শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের গোড়া থেকেই বিভিন্ন মহল এ আশঙ্কাই করছিলেন। একটি অহিংস আন্দোলন কীভাবে সহিংসতায় রূপ নিল, সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজলেই বিষয়টি বেরিয়ে আসবে নিশ্চয়ই। শিক্ষার্থীরা যখন কোটা বৈষম্যের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল, তখন সরকার পক্ষেরও নমনীয় মনোভাব প্রদর্শনের প্রয়োজন ছিল। তা না হওয়াতেই আন্দোলনকারী ও সরকার এমন মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়েছে। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে এখন শিক্ষার্থীদের সব দাবিই মেনে নেওয়া হয়েছে, আটক শিক্ষার্থীদের মুক্তি দেওয়া হয়েছে, আলোচনার জন্য গণভবনের দ্বার খুলে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা; কিন্তু আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সে আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে সরকারের পদত্যাগের একদফা দাবিতে অবস্থান নিয়েছে। ডাক দিয়েছে অসহযোগ আন্দোলনের।

২০১৮ সালে যখন কোটাবিরোধী কিংবা নিরাপদ সড়ক আন্দোলন হয়েছিল, তখন এর যৌক্তিকতা নিয়ে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ যে একমত হয়েছিল, তা বলাই বাহুল্য। তারুণ্যের শক্তি যে কেমন হতে পারে, নিকট অতীতের এ দুই আন্দোলনেও তার প্রমাণ মিলেছিল। কাজেই তারুণ্যের সাম্প্রতিক এ দাবিকে ক্ষমতাসীন দল সাংগঠনিক শক্তি দিয়ে মোকাবিলা করার চেষ্টায় যেটা হয়েছে; তা হলো, প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক শক্তি স্বাভাবিকভাবেই এ আন্দোলনকে প্রভাবিত করেছে। অধিকার আদায়ের অহিংস আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে নেওয়ার প্রচেষ্টায় তারা সফলও হয়েছে। এ সংকট সরকার এখন কীভাবে মোকাবিলা করবে, তা সময়ই বলে দেবে। তবে তা করতে গিয়ে দেশের কোথাও জানমালের ক্ষয়ক্ষতি হোক, তা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

শনিবার রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে যখন আন্দোলনকারীরা একদফা দাবির পাশাপাশি পরদিন অসহযোগের ডাক দিল, তখন ক্ষমতাসীন দলের কেন্দ্রীয় পর্যায়ের কয়েকজন নেতা সাংগঠনিক শক্তিকে পথে নামানোর ঘোষণা দিল। ফলে স্বাভাবিকভাবেই রোববার সকাল থেকে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতার খবর একের পর এক আসতে দেখলাম আমরা। ভুলে গেলে চলবে না, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সরকারের যে কোনো ভুল সিদ্ধান্ত তাদের জন্য বুমেরাং হয়ে দেখা দিতে পারে। প্রতিটি মুহূর্ত যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনই সরকারের আসনে থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে দূরদর্শিতার পরিচয় দেওয়াও নীতিনির্ধারকদের জন্য বাঞ্ছনীয়। কোনো ভুল সিদ্ধান্ত যদি দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেয়, তবে সেই দায় সরকারের ওপরই বর্তাবে। কাজেই কোনোভাবেই পরিস্থিতিকে আরও উসকে দেয়, এমন সিদ্ধান্ত নীতিনির্ধারক পর্যায় থেকে আসা উচিত নয়। এ সম্পাদকীয় যখন লেখা হচ্ছে, তখন জানা গেছে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এখন যারা আন্দোলন করছে তারা ছাত্র নয়, সন্ত্রাসী। তার এ বক্তব্য পরিস্থিতিকে কোথায় নিয়ে যাবে, সেটাও এক বড় আশঙ্কার বিষয়।

স্মরণে রাখতে হবে, চলমান পরিস্থিতির দিকে যেমন দেশের মানুষ উদ্বেগের সঙ্গে তাকিয়ে রয়েছে, আন্তর্জাতিক মহলও বাংলাদেশের পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। এরই মধ্যে পুলিশের গুলিতে দুই শতাধিক নিরপরাধ মানুষের মৃত্যুর বিষয়ে জাতিসংঘসহ একাধিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সুষ্ঠু বিচার বিভাগীয় তদন্তের আহ্বানও জানিয়েছে। আমরা আশা করি, রক্তপাত আরও বৃদ্ধি পায়, এমন সিদ্ধান্তের দিকে ধাবিত না হয়ে বরং পরিস্থিতি শান্ত করার দিকে সরকারের বেশি মনোযোগী হওয়া উচিত। পাশাপাশি আন্দোলনকারীসহ যেসব নিরীহ মানুষ সংঘর্ষ-সহিংসতায় হতাহত হয়েছেন, সেসবের দ্রুত বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিতে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। সংঘাত কখনোই কল্যাণ বয়ে আনে না। সবার আগে দেশ, এ কথা মাথায় রেখে দুপক্ষই সহনশীল মনোভাবের পরিচয় দেবে, এটাই প্রত্যাশা।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম