প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার
যথাযথ তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নিতে হবে
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৪ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ঢাকাসহ সারা দেশে সহিংসতায় বহু হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় দুই শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কয়েক হাজার, যাদের অধিকাংশই গুলিবিদ্ধ। উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, রাজপথে বাইরেও কেউ কেউ নিজের বাসায় কিংবা ছাদে গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন, যারা ছিলেন বিক্ষোভের বাইরে। এ অবস্থায় অভিযোগ উঠেছে, নিয়ম না থাকলেও বিক্ষোভ দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ‘প্রাণঘাতী অস্ত্র’ ব্যবহার করায় এমন প্রাণহানি ঘটেছে। বিষয়টি নিয়ে দেশে ও আন্তর্জাতিক মহলেও চলছে আলোচনা-সমালোচনা। আইনজ্ঞসহ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাধারণ নাগরিকদের আন্দোলন দমনে এমন প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার সংবিধান ও মানবাধিকারের স্পষ্ট লঙ্ঘন। যদিও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সরকারের একাধিক মন্ত্রী-এমপির দাবি, জীবন ও সম্পদ রক্ষার উদ্দেশ্যেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গুলি করতে বাধ্য হয়েছে।
গণমাধ্যমে আসা তথ্য বলছে, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে জুলাইয়ের ১৬ থেকে ২১ তারিখ পর্যন্ত ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনা ঘটে। কেউ ঘটনাস্থলে, কেউ আবার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ময়না তদন্ত রিপোর্ট এবং হাসপাতালের দেওয়া তথ্যমতে, এদের অনেকের মৃত্যু প্রাণঘাতী অস্ত্রের কারণে হয়েছে। তবে নিহতের ঘটনাগুলোয় পুলিশের এজাহারে প্রাণঘাতী অস্ত্রের কারণ উল্লেখ করা হলেও তা সন্ত্রাসী বা দুষ্কৃতকারীদের এলোপাতাড়ি গুলিতে মৃত্যু হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। পুলিশের এই ভূমিকা নিয়ে এরই মধ্যে বিভিন্ন মহলে সমালোচনা শুরু হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও বলছে, বিক্ষোভ দমনে আইনবহির্ভূতভাবে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে বলে তারা প্রমাণ পেয়েছে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, সাধারণত বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে পুলিশ লাঠি, গরম পানি, ঠান্ডা পানি, রঙিন পানি, কাঁদানে গ্যাসের শেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও রাবার বুলেট ব্যবহার করে। প্রয়োজনে বন্দুক থেকে গুলিও করে। তবে তা কোমরের নিচে করার নির্দেশনা থাকে। সাধারণত আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বাহিনীর কাছে সব ধরনের অস্ত্রই থাকে। তবে সেগুলো ব্যবহারের নিয়মও হয়ে থাকে কঠোর। পরিস্থিতি যদি ভয়াবহ হয় তবেই তা ব্যবহারের নিয়ম রয়েছে। শুধু আত্মরক্ষার প্রয়োজনেও যথাযথ কারণ ছাড়া গুলি চালানো নিষিদ্ধ। সেক্ষেত্রে নিরস্ত্র আন্দোলনকারীদের ওপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণ মানবাধিকার লঙ্ঘন অবশ্যই। কাজেই যারা এ ঘটনার জন্য দায়ী, তাদের তদন্তের মাধ্যমে খুঁজে বের করে কী পরিস্থিতিতে গুলিবর্ষণের ঘটনা তারা ঘটিয়েছে, তা উদ্ঘাটন করতে হবে।
যাদের অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ করা হয়েছে, নিয়মানুযায়ী তাদের ব্যয় করা গুলির হিসাব নিতে হবে। দোষী প্রমাণিত হলে প্রচলিত আইন অনুযায়ী তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। যদি মাঠ পর্যায়ের সদস্যদের ওপরমহল থেকে অন্যায় নির্দেশনা দেওয়া হয়ে থাকে, তাহলে কারা সেই নির্দেশদাতা এবং কেন এমন নির্দেশনা দিয়েছেন, সেটিও খতিয়ে দেখতে হবে। ভুলে গেলে চলবে না, আন্দোলন নিয়ন্ত্রণের একটি নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। চূড়ান্ত অবস্থা তৈরি হলেও কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম মেনেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হয়। নিয়ম যদি তারা না মেনে থাকেন, তাহলে বিষয়টি চরম উদ্বেগজনক, যা বলার অপেক্ষা রাখে না। সরকার পুরো বিষয়টি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে খতিয়ে দেখে কার্যকর ব্যবস্থা নেবে, এটাই প্রত্যাশা।