দুর্বল পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা, টেকসই সমাধান জরুরি
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১৬ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ফাইল ছবি
রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করার পরও কার্যত এর তেমন সুফল মিলছে না। সম্প্রতি অতিবৃষ্টিতে নাকাল নগরবাসী এর প্রমাণও পেয়েছেন। কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে বিভিন্ন সড়ক, অলিগলি থেকে শুরু করে বাজার, পাড়া-মহল্লা পানিতে ডুবে নগরজুড়ে তৈরি হয়েছিল স্থবিরতা।
পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার দুর্বলতা তো রয়েছেই, শহরের আশপাশে থাকা নদীগুলোর নাব্য হ্রাস পাওয়াও জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ। সোমবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ-ভরা বর্ষায় ঢাকার চারপাশের নদ-নদীর পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় সরাসরি পানি নিষ্কাশনে স্লুইসগেটগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে পাম্প করেই পানি নিষ্কাশন করা হচ্ছে। এ অবস্থায় গেল শুক্রবার ৬ ঘণ্টায় ১৩০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতে রাজধানীর সিংহভাগ এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়।
ব্যস্ত নাগরিক জীবনে প্রতিদিন আমাদের যানজটসহ নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। জীবনের তাগিদে তা সয়েই দিনাতিপাত করতে হয়। তবে জলাবদ্ধতার মতো কিছু সমস্যা আমাদের এতটাই কষ্ট দেয় যে, মাঝে মাঝে তা অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছে, দুর্ভোগের মাত্রা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। বিশেষজ্ঞরা বলে আসছেন, অপরিকল্পিত উন্নয়নের কারণে রাজধানীতে পুকুর, ডোবা ও জলাশয়গুলো ভরাট করা হয়েছে। অথচ বৃষ্টিপ্রবণ এলাকা হওয়ায় প্রয়োজন ছিল শহরে পানি ধারণের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা রাখা। তা না রাখায় ভারী বৃষ্টি হলেই নগরীর ড্রেনগুলো পানি নিষ্কাশনের সক্ষমতা হারিয়ে ফেলে, দেখা দেয় জলাবদ্ধতা।
বস্তুত রাজধানীর খালগুলো দখলের কারণে ক্রমান্বয়ে সংকুচিত হওয়া, যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলে খাল, নর্দমা ও জলাশয়গুলো ভরাট করা, নগরে কংক্রিট আচ্ছাদিত জায়গার পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় পানি নিষ্কাশন ক্ষমতা হ্রাস পাওয়া ইত্যাদি জলাবদ্ধতার বড় কারণ। পরিতাপের বিষয়, এসব সমস্যা চিহ্নিত হওয়া সত্ত্বেও সমাধানে নেই কোনো কার্যকর উদ্যোগ। ঢাকার খাল, নর্দমা ও পানি নিষ্কাশন চ্যানেল আধুনিকায়নের কথা বলে ঢাকা ওয়াসার কাছ থেকে দুই সিটি দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার সাড়ে ৩ বছর অতিবাহিত হলেও কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি দৃশ্যমান নয়। কাজেই দেরি না করে এ কাজগুলো ত্বরান্বিত করতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি বলে মনে করি আমরা।
রাজধানীর জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান না হওয়ার আরেকটি বড় কারণ দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতা। তাই রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে যেসব প্রতিষ্ঠানের প্রত্যক্ষ ভূমিকা রয়েছে, সেগুলো এক ছাতার নিচে আনা জরুরি। একইসঙ্গে রাজধানী ও এর আশপাশের নদী ও প্রাকৃতিক জলাধারগুলোর রক্ষণাবেক্ষণে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হলে সেগুলোও জলাবদ্ধতা নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তবে এ বিষয়ে যখন যে উদ্যোগই নেওয়া হোক না কেন, টেকসই সমাধানের লক্ষ্য বিবেচনায় রাখতে হবে। বিভিন্ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণও বাড়াতে হবে।
ভুলে গেলে চলবে না, জলাবদ্ধতায় শুধু যে মানুষের দুর্ভোগ বাড়ে তা নয়, এর সঙ্গে জড়িত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডও। রাজধানীর সড়কে এ ধরনের জলাবদ্ধতার অর্থ হলো দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন ও আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়া। ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরগুলোর জলাবদ্ধতা সমস্যার টেকসই সমাধানে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, এটাই প্রত্যাশা।