রোহিঙ্গা গোষ্ঠীর অপরাধপ্রবণতা : নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ জরুরি
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৩ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
এদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে অপরাধপ্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। খুন, ধর্ষণ, অপহরণ, মানব পাচার, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, ভুয়া নাগরিকত্ব গ্রহণ এবং নানা উপায়ে পাসপোর্ট সংগ্রহ করে বিদেশে যাওয়ার মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে তারা। কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, খুন-খারাবি নিত্যদিনের ঘটনা এখন। জানা গেছে, ক্যাম্পের ভেতর বেশ কয়েকটি রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রুপের তৎপরতা রয়েছে। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে প্রায়ই সহিংস ঘটনা ঘটছে। অতি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করেও প্রায়ই গোলাগুলি-খুনোখুনির মতো ঘটনা ঘটে।
শুধু ক্যাম্পের ভেতরে নয়, কক্সবাজার ও বান্দরবানের সীমান্তবর্তী নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুমের তুমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখা ও তোতার দ্বীয়া দ্বীপে তাদের জঙ্গি ঘাঁটি গড়ে ওঠার তথ্যও রয়েছে। সর্বশেষ গতকাল যুগান্তরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, লোহাগাড়া উপজেলায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পশ্চিম পাশ ঘেঁষে বিস্তীর্ণ এলাকায় অবস্থিত চুনতি অভয়ারণ্যে গাছপালা কেটে বনের জমি দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে বহু রোহিঙ্গা পল্লি। সব মিলে পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
বলাবাহুল্য, এ পরিস্থিতি দেশের জন্য মারাত্মক নিরাপত্তা ও পরিবেশগত ঝুঁকি তৈরি করেছে। রোহিঙ্গা গোষ্ঠী এদেশের জন্য বাস্তবিকই মাথাব্যথার কারণ এখন। এ অবস্থায় যেসব রোহিঙ্গা অপরাধে জড়িত, তাদের শক্ত হাতে দমন করা প্রয়োজন। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বাড়তি সতর্ক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলে মনে করি আমরা। ক্যাম্পের বাইরে যেসব স্থানে রোহিঙ্গারা অবস্থান করছে, সেসব স্থানেও নিতে হবে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা। তারা যাতে পরিবেশ ও প্রতিবেশের জন্য ক্ষতির কারণ হতে না পারে, সেদিকেও লক্ষ রাখতে হবে। এজন্য ক্যাম্পের ভেতরে ও বাইরে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা দরকার। বর্তমানে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহীদের মধ্যে সংঘাতের ফলে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে নতুন করে রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে দেশে আর কোনো রোহিঙ্গা যাতে প্রবেশ করতে না পারে, সেজন্য নিতে হবে কার্যকর ব্যবস্থা।
২০১৭ সালে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা গোষ্ঠীসহ ১২ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বর্তমানে বাংলাদেশে অবস্থান করছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ সরকার বরাবরই জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু দীর্ঘ প্রায় ৭ বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি। রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ফিরে যাক, সেটা চায় না সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো। তাই প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনা শুরু হলেই রোহিঙ্গা শিবিরে বেড়ে যায় সন্ত্রাসী তৎপরতা। মিয়ানমারে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন যাতে না হয়, সেজন্য বিভিন্ন ক্যাম্পের নেতাদের টার্গেট করে আক্রমণকারীরা। এ কারণে রোহিঙ্গা নেতাদের অনেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে শিবিরের বাইরে নিরাপদ জায়গায় বাসা ভাড়া করে থাকেন বলেও ইতঃপূর্বে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
রোহিঙ্গা সংকটের একমাত্র সমাধান হলো তাদের নিজ দেশে প্রত্যাবর্তন। এক্ষেত্রে যে অচলাবস্থা বিরাজ করছে, তার অবসানে জোরালো উদ্যোগ নিতে হবে। এদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের অপরাধ এবং বাংলাদেশের নিরাপত্তার বিষয়টি জাতিসংঘে উত্থাপনের পাশাপাশি চীন, ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বৃহৎ শক্তিগুলোর সঙ্গে এ সংক্রান্ত কূটনৈতিক যোগাযোগ বাড়াতে হবে।