আইএমএফের সুপারিশ
দুর্নীতি রোধে আর্থিক খাতে সংস্কার প্রয়োজন
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২৮ জুন ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
দেশের আর্থিক খাতে নিয়ন্ত্রণ কাঠামো জোরদার এবং সুশাসন নিশ্চিতে সংস্কার কার্যক্রম আরও ত্বরান্বিত করার সুপারিশ করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক সর্বোত্তম অনুশীলনের সঙ্গে সংগতি রেখে দেশের আর্থিক খাতের ঋণ প্রতিবেদন প্রণয়নে স্বচ্ছতা আরও বাড়ানোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে। ডলারের দাম আরও বাড়ানোর সুপারিশ করেছে সংস্থাটি। দুর্নীতি কমাতে প্রতিবছর সরকারি কর্মকর্তাদের সম্পদের তালিকা নেওয়ার সুপারিশও করেছে আইএমএফ। সোমবার প্রকাশিত আইএমএফের প্রতিবেদনে এসব সুপারিশ করা হয়। বাংলাদেশ যেহেতু আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ নিচ্ছে, সেহেতু সংস্থাটির শর্ত মোতাবেক দেশের বিভিন্ন খাতে সংস্কারমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। তবে আমরা মনে করি, আইএমএফের সুপারিশ অনুযায়ী ডলারের দাম আরও বাড়ানোর আগে বিনিয়োগ ও মূল্যস্ফীতিতে এর প্রভাবসহ আনুষঙ্গিক অন্যান্য বিষয় বিবেচনায় নেওয়া উচিত। এদিকে দেশের সাবেক কয়েকজন প্রভাবশালী সরকারি কর্মকর্তার দুর্নীতি নিয়ে বর্তমানে ব্যাপক আলোচনা চলছে। এ প্রেক্ষাপটে প্রতিবছর সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদের তালিকা নেওয়ার সুপারিশটি যৌক্তিক। এ প্রক্রিয়া দেশে দুর্নীতি কমাতে সহায়তা করবে।
আইএমএফের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সমন্বয় করে আর্থিক খাতে ঋণসংক্রান্ত প্রতিবেদনগুলো তৈরি করতে হবে এবং খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা আন্তর্জাতিক মানের করতে হবে। উল্লেখ্য, দেশে খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা আন্তর্জাতিক মানের নয়। এক্ষেত্রে অনেক ছাড় দিয়ে সংজ্ঞা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ কারণে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী কেউ ঋণখেলাপি হওয়ার যোগ্য হলেও এর কমপক্ষে ৩ থেকে ৬ মাস পর তিনি খেলাপি হিসাবে বিবেচিত হচ্ছেন। এছাড়া ঋণ বিতরণের পর যেসব প্রতিবেদন তৈরি করা হয়, সেগুলোতে ফাঁকফোকর রয়েছে। প্রতিবেদন দেখে বোঝার উপায় থাকে না, ঋণটি কি আদৌ ভালো অবস্থায় আছে নাকি খেলাপির দিকে যাচ্ছে। বস্তুত ঋণখেলাপিদের আর ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই। খেলাপি ঋণের কারণে আর্থিক খাতে নানামুখী সংকট সৃষ্টি হয়েছে। গত কয়েক বছরে ঋণখেলাপিদের নানা রকম সুযোগ-সুবিধা ও ছাড় দেওয়া সত্ত্বেও সুফল পাওয়া যায়নি। শুধু তাই নয়, ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের ঋণের পরিমাণ আরও বেড়েছে। কাজেই খেলাপি ঋণ আদায়ে সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিতে হবে। একইসঙ্গে অর্থ পাচার রোধেও নিতে হবে যথাযথ পদক্ষেপ। দেশের আর্থিক খাতে বিদ্যমান নানামুখী সংকটের তীব্রতা কমাতে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, সেসবে কেন সুফল মিলছে না, তা-ও খতিয়ে দেখতে হবে। আর্থিক খাত ও ব্যাংকব্যবস্থাসহ বিভিন্ন খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিতে হবে।