কনডেম সেল থেকে পলায়ন
কারাগারের নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২৮ জুন ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বগুড়া জেলা কারাগারের কনডেম সেলের ছাদ ছিদ্র করে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চার কয়েদির অভিনব কৌশলে পলায়নের ঘটনা জনমনে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। যদিও পরে ওই চার কয়েদিকে আবার গ্রেফতার করা সম্ভব হয়েছে, তবে তারা কীভাবে কারাগারের সুরক্ষিত বেষ্টনী থেকে বেরিয়ে যেতে পারল, এটি এক বড় প্রশ্ন। তাদের গায়ে জেলের পোশাক ছিল না কেন, এটি আরও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। জানা যায়, ওই চার কয়েদি বালতির লোহার হাতল দিয়ে প্রায় এক মাস ধরে ছাদের এক কোণের একটি অংশ ছিদ্র করে তা গলিয়ে বেরিয়ে যায় এবং বিছানার চাদর দিয়ে রশি বানিয়ে ছাদে ওঠে। এরপর ওই রশি বেয়ে প্রাচীর থেকে নেমে পালিয়ে যায়। আমরা জানি, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দিদের সেলে প্রতিদিন তল্লাশির বিধান রয়েছে। এছাড়া প্রতিটি কনডেম সেলে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তাকর্মী রাখা হয়। সেক্ষেত্রে এই দীর্ঘ সময়ে কোনো জেলা কর্মকর্তা বা কর্মচারীর ছাদ ছিদ্র করার ঘটনা নজরে পড়ল না কেন, এটিও একটি প্রশ্ন। সব মিলে এ ঘটনার জন্য জেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিছক অবহেলাই দায়ী, নাকি এর সঙ্গে কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারীর যোগসাজশ ছিল, তা উদ্ঘাটিত হওয়া জরুরি।
এ ঘটনার পর দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে ইতোমধ্যে প্রধান কারারক্ষীসহ তিনজনকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। ঘটনার কারণ উদ্ঘাটনে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে প্রধান করে। এছাড়া অতিরিক্ত আইজি প্রিজনের নেতৃত্বে আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে বলে জানা গেছে। আমরা আশা করব, অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে এসব কমিটির তদন্তকাজ পরিচালনা করা হবে, যাতে ঘটনার প্রকৃত তথ্য বেরিয়ে আসে। কারণ এর সঙ্গে কারাগারের নিরাপত্তার প্রশ্ন জড়িত। কারাগারকে বলা হয়ে থাকে সবচেয়ে নিরাপদ স্থান। এক্ষেত্রে নিরাপত্তায় কোনো ঘাটতি বা ছিদ্র থেকে থাকলে তা বন্ধ করা জরুরি।
বগুড়ার এই কারাগার ভবনটি অনেক পুরোনো। ইট-সুরকির ভবনের ছাদে কোনো রড ছিল না। এ সুযোগটি নিয়েছিল কয়েদিরা। দেশের বিভিন্ন স্থানে এমন পুরোনো কারাগার ভবন আরও রয়েছে। সেগুলোর ছাদও দুর্বল হওয়ার কথা। সেক্ষেত্রে কোথাও যেন এমন ঘটনা আর না ঘটে, আগেভাগেই নিতে হবে তার ব্যবস্থা। বস্তুত সারা দেশেরই কারাগারগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা প্রয়োজন।
বগুড়া জেলা কারাগারের পালিয়ে যাওয়া চার আসামিকে যে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়েছে, এটি স্বস্তির বিষয় অবশ্যই। জানা গেছে, জেলখানা থেকে প্রায় এক কিলোমিটার উত্তরে ফতেহ আলী বাজারের পাশে করতোয়া নদীর ধার থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয় বগুড়া সদর ফাঁড়ির এসআই খোরশেদ আলমের নেতৃত্বে। এ কৃতিত্বের জন্য পুলিশ দলটিতে থাকা সবাই সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। তবে মনে রাখতে হবে, কয়েদিরা কারাগার থেকে বের হয়ে পালিয়ে যাচ্ছিল। এক্ষেত্রে কারাগারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা বা কারা কর্তৃপক্ষের দুর্বলতা সঠিকভাবে শনাক্ত করে তা দূর করতে হবে যে কোনো উপায়ে।